ডুয়ার্স দখলেও হাতিয়ার বোর্ড

মোর্চায় গুরুঙ্গের কর্তৃত্ব খানিক আলগা হতেই ডুয়ার্স থেকে নেতা-কর্মীদের দলে টানতে সক্রিয় হয়েছে শাসক তৃণমূল। লক্ষ্য, এই কর্মীদের দলে টেনে যাতে বিজেপি দলে টানতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।

Advertisement

কিশোর সাহা

মালবাজার (জলপাইগুড়ি) শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

মোর্চায় গুরুঙ্গের কর্তৃত্ব খানিক আলগা হতেই ডুয়ার্স থেকে নেতা-কর্মীদের দলে টানতে সক্রিয় হয়েছে শাসক তৃণমূল। লক্ষ্য, এই কর্মীদের দলে টেনে যাতে বিজেপি দলে টানতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এ বার ডুয়ার্সে কর্তৃত্ব জোরালো করতে পাহাড়ের ধাঁচে উন্নয়ন বোর্ডের সম্ভাবনাও জোরালো হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতি ও শুক্রবার, দু’দিন ধরে জয়গাঁ, মাদারিহাট, নাগরাকাটা, মালবাজারে ঘুরে শতাধিক মোর্চা নেতা ও তাঁদের কয়েক হাজার সমর্থককে তৃণমূলে সামিল করেছেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ারের পর্যবেক্ষক, রাজ্যের পূর্ত ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর কাছেই সদ্য যোগদানকারীরা তরাই-ডুয়ার্সের নেপালিভাষীদের জন্য একটি বোর্ড গঠনের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, ওই আর্জিকে সরকার গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে ডুয়ার্সের গোর্খা জনজাতির মধ্যে সর্বজনগ্রাহ্য ও জনপ্রিয় বিশিষ্টজন, নেতাদের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ডুয়ার্সের গোর্খা জনজাতি তথা নেপালিভাষীদের বোর্ডের আর্জির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাহাড়ে নেপালি ভাষীদের নানা সম্প্রদায়ের আর্জি মেনে ইতিমধ্যেই ১৪টি বোর্ড গঠন করেছে রাজ্য। তা নিয়ে বিভেদের অভিযোগ তুলে সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে রাজ্যকে। তরাই-ডুয়ার্সের আদিবাসীদের উন্নয়ন বোর্ডও রয়েছে। এর পরেও ডুয়ার্সের নেপালিভাষীদের নিয়ে আরও একটি বোর্ড গড়ার আর্জি কেন বিবেচনা করতে চাইছে রাজ্য? তৃণমূলের অন্দরের খবর, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে চা বলয়ের নেপালিভাষীদের বিজেপি থেকে দূরে রেখে নিজেদের কাছে টানতেই এই কৌশল। কারণ তরাই-ডুয়ার্সের চা বলয়ে বিজেপির প্রভাব রয়েছে। লোকসভায় বিপুল ভোট পেয়েছিল বিজেপি। গত বিধানসভাতেও ডুয়ার্সের মাদারিহাট থেকে বিজেপির টিকিটে জেতেন মনোজ টিগ্গা। তা ছাড়া পৃথক বোর্ড হলে, আগামী দিনে পাহাড়ের আন্দোলনের সঙ্গে তরাই-ডুয়ার্সের তাল মেলানোর প্রবণতাও অনেকটা কমবে বলে তৃণমূলের অনেকের ধারণা। অরূপবাবু বলেন, ‘‘আমার কাছে আরও অনেকে আর্জি জানিয়েছেন। আমি নেত্রীকে জানাব। তিনি এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

Advertisement

পাহাড়ের নেতৃত্বের কথা শুনে আন্দোলন করলেও ডুয়ার্সের নেপালিভাষীদের দাবিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে ক্ষোভ ছিলই। সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সন্দীপ ছেত্রী, রাজু লামা, পিঙ্কি ছেত্রীরা সেই কথাই বলেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, জিএনএলএফের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘিসিঙ্গ পার্বত্য পরিষদ গঠনের পরে তরাই-ডুয়ার্সের নেপালিভাষীদের ভুলে গিয়েছেন। পরে গুরুঙ্গের পাশে দাঁড়ালেও জিটিএ হওয়ার পরে তরাই-ডুয়ার্সের নেতা-কর্মীদের বাড়তি সুবিধা দেননি। সাম্প্রতিক আন্দোলনে তরাই-ডুয়ার্সের নেতারা গ্রেফতার হলেও পাহাড়ের মোর্চা নেতৃত্ব খোঁজখবর করেননি বলে অভিযোগ তাঁদের। পিঙ্কি বলেন, ‘‘আমাদের কোথাও জায়গা মেলেনি। আমরা নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নের সুযোগ চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন