গায়ে কালো কোট চাপানো একাধিক উকিলবাবু বা উর্দিধারী পুলিশ কর্মী। সাধারণ মানুষের সঙ্গেই আম কিনতে লাইনে সামিল তাঁরা। বাদ নেই সরকারি আমলারাও। মালদহের উদ্যান পালন দফতর সংলগ্ন এলাকায় হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়ার পাশাপাশি রকমারি সুস্বাদু আমের স্টল বসিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ সাব ট্রপিক্যাল হর্টিকালচারের আধিকারিকরা। আর এই সরকারি স্টলেই এখন আম কেনার হিড়িক।
মালদহের আইনজীবী গোলাম গউস খান লোধি বলেন, ‘‘এখানে যে শুধু বাজার থেকে কম দামে আম মিলছে তাই নয়, পাওয়া যাচ্ছে উন্নতমানের আমও। সম্প্রতি বাজার থেকে কাঁচা মিঠে আম কিনে ঠকতে হয়েছিল। এই স্টলে সেই ভয় নেই। এখানকার আম পাকাতে কার্বাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রয়োগও নেই।’’
আইনজীবীর সুরেই সুর মিলিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ অফিসার। তিনি বলেন, ‘‘এমন স্টল সর্বত্র খোলা হলে মানুষ বুঝতে পারবে কেন মালদহের আমের এতো সুনাম।’’ চলতি বছর ভালো সাড়া মেলায় আগামী বছর উন্নতমানের আমের পসরা নিয়ে আরও স্টল খোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন মালদহের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ সাব ট্রপিক্যাল হর্টিকালচারের বিজ্ঞানীরা।
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মালদহ জেলার তৈরি হয় সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ সাব ট্রপিক্যাল হর্টিকালচার কেন্দ্রটি। এই কৃষি ফার্মের অধীনে ৭০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। সেই বাগানে এ বারে ৮০ প্রজাতির আমের ফলন হয়েছে। ফজলি, হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ, রাখালভোগ আমের পাশাপাশি রানিপসন্দ, গোপালখাস, মধু চুসকি, কোহিনূর, মল্লিকার মতো আম রয়েছে।
শুধু তাই নয়, আপেল, লিচু এবং সবেদার মতো আমও রয়েছে এই বাগানে। যা ইতিমধ্যে জেলায় ভালো সাড়া ফেলেছে।
নতুন প্রজাতির আমের ফলনের পাশাপাশি মালদহের আমের সুনাম কেন হারাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষাও শুরু করেছেন। জানা গিয়েছে, মালদহে কার্বাইডের সাহায্যে আম পাকানোর প্রবণতা বাড়ছে।
দামের লোভে অপরিণত অবস্থায় আম পেড়ে কার্বাইডের সাহায্যে তা পাকিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। এতে যে শুধু আমের গুণগত মানই কমছে, ক্ষতি হচ্ছে শরীরেরও।
আম বিশেষজ্ঞ তথা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দীপক নায়েক বলেন, ‘‘আমাদের বাগানে উৎপাদিত আমগুলি নির্দিষ্ট সময়ই গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে। তারপরই তা স্টলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী দিনে বেশকিছু চাষিকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করে পদ্ধতি মেনে আম চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে। সাফল্য পেলে জেলা জুড়েই তা করা হবে।’’