দলীয় সদস্য ‘ছিনিয়েই’ বোর্ড গঠন

দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২১ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ১৬ জনকে দিন সাতেক আগে জয়গাঁর একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখেন স্থানীয় এক নেতা। যিনি তাঁর স্ত্রীকে প্রধান পদের জন্য মনোনীত করেছিলেন।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৮
Share:

টহল: বোর্ড গঠন ঘিরে উত্তেজনা ছিল দিনভর। অশান্তি রুখতে টহল কোচবিহারের ঘুঘুমারিতে। শুক্রবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

রাতভর নাটক। কোথাও পঞ্চায়েত সদস্যদের একপক্ষের হাত থেকে ছিনতাই করে নিয়ে গেল আরেকপক্ষ। কোথাও রাতভর লাঠিসোটা নিয়ে চলল পাহারা।

Advertisement

শুক্রবার কোচবিহারে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে বৃহস্পতিবার এমনই টানা উত্তেজনা ছিল রাতভর। এ দিন কোচবিহারের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়। তার মধ্যে কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই পক্ষের লড়াই তুঙ্গে ওঠে। তা নিয়ে ফাঁপরে পড়েন দলীয় নেতৃত্ব। সকাল থেকেই ওই পঞ্চায়েতগুলিতে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে বোর্ড গঠন হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বড় কোনও গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেনি। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “সব জায়গাতেই তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধান হয়েছে। দলীয় সদস্যরা যাঁকে চেয়েছেন তিনি ওই পদ পেয়েছেন।” দ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ও।

নেতারা মুখে দ্বন্দ্ব স্বীকার না করলেও দু’পক্ষের লড়াইয়ের কথা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মুখে মুখে ঘুরছে। দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২১ জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে ১৬ জনকে দিন সাতেক আগে জয়গাঁর একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখেন স্থানীয় এক নেতা। যিনি তাঁর স্ত্রীকে প্রধান পদের জন্য মনোনীত করেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকের চিলাপাতার রাস্তায় ওই পঞ্চায়েত সদস্যদের গ্রামে ফিরেয়ে আনা হচ্ছিল। সেই সময় জঙ্গলের ভিতরেই যুব তৃণমূলের একটি দল আচমকাই হাজির হয় সেখানে। ৯ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে রীতিমতো ‘ছিনতাই’ করে সঙ্গে নিয়ে অন্য রাস্তায় বেরিয়ে যায় তাঁরা। এ দিন তাঁদের প্রস্তাব মেনেই শেষ পর্ষন্ত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে। একই ভাবে হাড়িভাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে রাতভর দুইপক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে পাহারায় নামে। ওই এলাকাতেও যুব ও তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। একই অবস্থা ছিল পানিশালা, জিরানপুর, মোয়ামারি এলাকাতেও।

Advertisement

কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ঘুঘুমারি, হাড়িভাঙ্গা, জিরাণপুর, পানিশালা, মোয়ামারি, পাটছড়া, পুটিমারি-ফুলেশ্বরী, সুটকাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ দিন বোর্ড গঠন হয়। তার মধ্যে ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যুব সংগঠনের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন যুব তৃণমূলের নেতা সাংসদ পার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি বলেন, “যুব সংগঠনের সদস্যদের দল প্রাধান্য দেওয়ায় সংগঠন শক্তিশালী হবে। সেই সঙ্গে দলও শক্তিশালী হবে।” তৃণমূলের কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি খোকন মিয়াঁ অবশ্য বলেন, “দলীয় নির্দেশ মেনে ছাত্র ও যুব প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে সব জায়গায় বোর্ড গঠন হয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এসেছে।”

এ দিন কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের খাগরাবাড়ি, টাকাগাছ রাজারহাট এবং তুফানগঞ্জ-১ নম্বর ব্লকের মারুগঞ্জ, নাককাটিগাছ, নাটাবাড়ি-১, নাটাবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন