সন্তানকে আগলে রাখতে শিশু চুরি

শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল চত্বর থেকে জ্যোতিনগর কলোনির সুশান্ত ও সোমা সরকারের ২৫ দিনের শিশুপুত্রকে চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত সবিতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৬
Share:

ফেরা: মায়ের কোলে উদ্ধার হওয়া শিশু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের সন্তানকে কাছছাড়া না করতেই অন্যের সন্তান চুরির ভাবনা বলে কবুল করল শিশুচুরি কাণ্ডে অভিযুক্ত সবিতা গড়াই।

Advertisement

সবিতার সঙ্গে তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে মাস ছয়েক। কিন্তু গর্ভে তাঁরই সন্তান। সে পৃথিবীর আলো দেখলেই তাকে নিয়ে যাবেন বলে সম্প্রতি শ্রীরামপুর থেকে টেলিফোন করে জানিয়েছিল সবিতার স্বামী। নিজের সন্তানকে যাতে ছাড়তে না হয় সেই চিন্তা থেকেই সে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি করে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পরে টানা জেরায় সবিতা ও তার বাবা সুকুমার দত্ত এমনই দাবি করেছেন।

শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল চত্বর থেকে জ্যোতিনগর কলোনির সুশান্ত ও সোমা সরকারের ২৫ দিনের শিশুপুত্রকে চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত সবিতা। গত মঙ্গলবার দুপুরে বাবার সাহায্যে ধূপগুড়িতে শিশুটিকে নিয়ে আত্মগোপনও করে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের জালে ধরা পড়ে যান বাবা ও মেয়ে। উদ্ধার হয় শিশু। শুক্রবার বিকেলে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে তা নিশ্চিত করেই সুশান্ত ও সোমাদেবীর হাতে নবজাতকটিকে তুলে দেন হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ।

Advertisement

সোমাদেবী মঙ্গলবার প্রসূতি বিভাগে এসেছিলেন চিকিৎসক দেখাতে। সেই সময় তাঁর কিশোরী ননদকে ঘুগনি খাইয়ে শিশুটি নিয়ে পালায় সবিতা। রাতে ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া পূর্ব মাঝাবাড়ির ভাড়া বাড়িতে রাত কাটায়। রাস্তায় কৌটার দুধ, জামাকাপড়ও কেনে। পরেরদিন, সকালে বাবার ভাড়া বাড়ি হাতিয়াডাঙায় পৌঁছায়। পরে বাবা ও মেয়ে হাতিয়াডাঙা থেকে অটো, টোটো ধরে ফাটাপুকুরে যায়। সেখানে রাস্তার ধারে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পরে সরকারি বাস ধরে ধূপগুড়ির ঠাকুরপাটের বাড়িতে চলে যান। সেখানেও মেয়ের সন্তান হয়েছে বলে দাবি করেন সুকুমারবাবু।

ইতিমধ্যে হাসপাতালে বিক্ষোভ, গণ সংগঠনগুলির স্মারকলিপি নানা কিছু চলতে থাকে। রাতে খবর পেয়ে সুকুমারবাবুর মোবাইল ট্র্যাক করে ধূপগুড়ি পৌঁছে যায় পুলিশ। মাঝরাতে উদ্ধার হয় শিশু। গ্রেফতারের পর সবিতা জানান, ‘ভালবেসে’ শিশুটিকে সে নিয়ে গিয়েছিল। পরে জানায়, শিশুর মা ও পিসিকে খুঁজে না পাওয়ায় বাড়ি নিয়ে যায়। রাতে আদালত থেকে পুলিশি হেফাজতে আসার পর বাবা ও মেয়েকে টানা জেরা শুরু করে। তখনই আসল তথ্য সামনে আসে। এমনকি, তার স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রীরামপুরে মামলা রয়েছে বলেও জানায় সবিতা। জেল খাটা স্বামীর ভয়ে এবং নিজের সন্তানকে হাতছাড়া না করার জন্য এমন করেছে বলেও দাবি করেন।

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘ধৃতরা যা বলেছে তা আদালতে জানানো হবে। এঁদের সঙ্গে আরও কেউ আছেন কি না তাও দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন