কখনও বিয়ের টোপ দিয়ে, কখনও কাজের লোভ দেখিয়ে ভিন রাজ্যে সাবেক ছিটমহলের কিশোরীদের পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশি তথ্য উঠে এসেছে, গত এক বছরে সাবেক ছিটমহল থেকে ৬৮ জন কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে। এদের অধিকাংশকেই পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশই। ইতিমধ্যে এদের মধ্যে ৮ জনকে দিল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ছিটমহল যখন ছিল, তখনই ওই এলাকায় পাচার চক্রের সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারাই এখনও কিশোরীদের ভিন রাজ্যে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ। তদন্তে জোর আনার পাশাপাশি ওই এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে তাঁরা। রবিবার দিনহাটার পোয়াতুর কুঠিতে পথনাটিকার মাধ্যমে বাসিন্দাদের বোঝানো হয়েছে।
দিনহাটার এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাবেক ছিটমহলের মানুষের মধ্যে পাচারের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। ওই এলাকা থেকে বেশ কিছু মামলা আমরা পেয়েছি পাচার সংক্রান্ত। সেগুলির তদন্ত চলছে। এক জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।” পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ছিটমহল থাকার সময় ওই এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি কম থাকার সুবিধে নিয়েই পাচার চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। ছিটমহল থাকার সময় ওই এলাকা থেকে এমন ভাবেই বহু কিশোরী পাচার করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই তথ্য সামনে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছে অনেকেই। পুলিশের সঙ্গে সচেতনতা অভিযানে নেমেছে কোচবিহার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, “পাচার বন্ধ করতে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। তা হলে প্রথমেই বাধা পাবে পাণ্ডারা। এমনকী তাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, কোচবিহারে নারী পাচার নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা থেকে নারী পাচার এক সময় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। বিয়ের টোপ দিয়ে আবার কখনও বিয়ে করে ভিন রাজ্যে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে বহু এলাকাতে। কয়েক বছর আগে নিশিগঞ্জ থেকে দুই কিশোরীকে কাজের টোপ দিয়ে হরিয়ানায় নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে এক জন পালিয়ে এসে পুলিশকে সব জানায়। পরে হরিয়ানা ও কোচবিহার পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে আরেক কিশোরীকে উদ্ধার করে। এমন ঘটনা দিনহাটা থেকে শুরু করে মেখলিগঞ্জ, তুফানগঞ্জের মতো এলাকাতেও রয়েছে।
সাবেক ছিটমহলের একটি বড় অংশ রয়েছে দিনাহাটা মহকুমায়। ছিটমহল বিনিময়ের আগে কিন্তু নারী পাচারের বিষয়টি সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। গত বছরের ৩১ জুলাই ছিটমহলের বিনিময়ের পর থেকেই তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। সেই সময় থেকে পুলিশে অভিযোগ জানানোর অধিকার পান বাসিন্দারা। পুলিশের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, সেই সময় থেকেই প্রতি সপ্তাহে দুটি করে নারী পাচারের মামলা দায়ের হতে শুরু করে দিনহাটা থানায়। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬৮টি মামলা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, প্রেম করে বা বিয়ের টোপ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিশোরীদের, তারপর থেকে ওই কিশোরীর কোনও হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছ, ওই কিশোরীদের অধিকাংশকেই দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিন নিশিগঞ্জের বিষয়টি সামনে এনেই পথনাটিকা হয় পোয়াতুর কুঠিতে।
নারী পাচারের উপরে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মইনুল হক বলেন, “এই অঞ্চলের মানুষদের অনেকেই খুব গরিব। পাচারকারীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁদের ভিনরাজ্যে পাচার করে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি এই অবস্থা নিয়ে টানা প্রচার অভিযান চালাতে হবে।”