মত দিয়েও দেশে না আসা সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের ‘মনোভাব’ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকে রিপোর্ট দেবেন বাংলাদেশ সফর সেরে ফেরা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
শনিবার তিনদিনের বাংলাদেশ সফর সেরে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত হয়ে দেশে ফেরেন কেন্দ্রের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বুধবার ওই বাসিন্দাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের মনোভাব জানতে বাংলাদেশ সফরে যায় ওই প্রতিনিধি দলটি। দলের নেতৃত্বে ছিলেন অতিরিক্ত রেজিস্টার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া সুনীলকুমার চক্রবর্তী।
সরকারি সূত্রের খবর, বাংলাদেশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম ও লাগোয়া জেলার সাবেক ছিটমহল এলাকাগুলিও তারা সরেজমিনে ঘুরে বিশদে খোঁজখবর নিয়েছেন। ওই বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। তাতে ওই বাসিন্দারা এদেশে আসতে আগ্রহী নন বলে জানা গিয়েছে। যদিও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল সুনীলবাবু বিশদে কিছু বলতে চাননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া , “ যা রিপোর্ট সেটা বিদেশ মন্ত্রকে দেওয়া হবে।”
সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত জুলাইয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়। দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারত ভূখন্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। তারপরেই দুই দেশের প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথ জনমত সমীক্ষা হয়। বাসিন্দারা কে কোন দেশের নাগরিক হিসাবে থাকতে চান তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। তাতে সাবেক ভারতীয় ছিটমহলের ৯৯৫ জন বাসিন্দা ঠিকানা বদলে এদেশে আসতে চান বলে জানান। সময়সীমা পেরোনোর পরে দেখা যায়, ৯২২ জন বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ড বলে পরিচিত সাবেক ভারতীয় ছিটমহল থেকে এ দেশে এসেছেন। কোচবিহারের দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়িতে তিনটি অস্থায়ী শিবির তৈরি করে ওই বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মত দেওয়ার পরেও ৭৩ জন বাসিন্দা না আসায় তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে ওই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ যায়। সেখানে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি বাসিন্দাদের মধ্যে বেশিরভাগের সঙ্গে প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। ওই বাসিন্দারা নানা কারণে ঠিকানা বদল করে এখন আসতে আগ্রহী নন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর সেরে ফিরে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা বিদেশ মন্ত্রকে রিপোর্ট দেবেন। আমাদের কাছে নির্দেশ এলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।” নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের কাছে খবর রয়েছে ওই বাসিন্দারা এখন আসতে চাইছেন না। রিপোর্ট প্রকাশ হলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের আসতে বাধা দেওয়া নিয়ে আগে অনেকের তোলা অভিযোগ যে ভিত্তিহীন ছিল সেটা স্পষ্ট হবে।’’