মেডিক্যালে তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল। নিজস্ব চিত্র।
আইএনটিটিইউসি নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে নালিশ করে তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের একদল ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা। বুধবার ওই ঘটনায় দলেরই বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে কোন্দল সামলাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নির্দেশে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষ, জন নন্দী, দলের কাউন্সিলর তথা জেলা নেতৃত্বের অন্যতম কৃষ্ণ পাল, রঞ্জন সরকারের মতো নেতারা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মঙ্গলরাতে ঘটনা শোনার পরেই পুলিশকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এ দিন দলের নেতাদেরও পাঠিয়েছিলাম। আমি ফিরে গিয়ে সকলকে নিয়ে বসে কথা বলব।’’
কুকুরে কামড়ানোর ইঞ্জেকশন দেওয়া নিয়ে রোগীর আত্মীয় তথা হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং তাঁর লোকজনদের বিরুদ্ধে এক জুনিয়র চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে ওই জুনিয়র চিকিৎসক এবং টিএমসিপি’র মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের ছাত্ররা হাসপাতাল সুপার এবং অধ্যক্ষকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার দাবি জানান। হাসপাতালের ওই কর্মী এবং অপর চার জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার মধ্যে আইএনটিটিইউসি নিয়ন্ত্রিত শুশ্রুত সোস্যাল অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস সংগঠনের সভাপতি কল্যাণ রায়চৌধুরী এবং সম্পাদক পাপ্পু ঘোষের নাম রয়েছে। অভিযোগটি প্রহৃত জুনিয়র চিকিৎসকের তরফে করা হলেও তাঁর সঙ্গে থাকা টিএমসিপি’র ছাত্র নেতারা পরামর্শ দিয়েছে বলে হাসপাতালেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্যতম তথা টিএমসিপি’র মেডিক্যাল কলেজ ইউনিটের সভাপতি অভীক দে বলেন, ‘‘আমার ঘেরাও করিনি। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছিলাম। পুলিশি নিরাপত্তার দাবি করেছি।’’
পাপ্পুবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিষয়টি আইএনটিটিইসি’র জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। আমরা সাতে পাঁচে নেই। অথচ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে দলেরই ছাত্র সংগঠনের নেতাদের একাংশ কিছু হলেই আমাদের হেনস্থা করতে চাইছে। অকারণে আমাদের নাম জড়িয়ে হেনস্থা করছে।’’ থিকনিকাটা এলাকার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পল্লব সরকারের দাবি, পাপ্পুবাবু ও কল্যাণবাবুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রমাণ চাই। না হলে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় আমরা প্রতিবাদে এলাকার দোকান, অটো, অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল বন্ধ করে দেব।’’ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর গেটের কাছে থাকা আইএনটিটিইউসি’র অটো স্ট্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটির তরফেও জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। সংগঠনের সম্পাদক জগদীশ রায় বলেন, রাতে গোলমালের সংগঠনের পতাকার বাঁশ খুলে পতাকা সমেত ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাতে কয়েকজনের বাড়িতে ঢিলও ছোড়া হয়। সংগঠনের জেলা নেতাদের বিস্তারিত বলেছি।’’
এ দিনও সকাল থেকে ফের সুপারের দফতরে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসক, টিএমসিপি’র ছাত্র নেতাদের একাংশ। অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায়ের সঙ্গে তা নিয়ে একাংশের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সাংবাদিকরা সে সময় ঘরে ঢুকলে তাঁদের কয়েকজনকে ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামলাতে এডিসিপি ভোলানাথ পাণ্ডে, এসিপি (ইস্ট) পিনাকী মজুমদার, এসিপি (ওয়েস্ট) মানবেন্দ্র দাস সুপারের দফতরে যান। কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ কাজে না যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। টিএমসিপির জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়কে নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতা এবং আইএনটিটিইউসি’র নেতৃত্বরা সুপারের ঘরে গিয়ে কথা বলেন। এর পরেই প্রহৃত জুনিয়র চিকিৎসক মনীষ সরকার বলেন ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলে নেই। রাজ ইসলাম এবং আরও কয়েক জনের নামে অভিযোগ করেছিলাম। মূল অভিযুক্ত রাজ ইসলাম ঘটনায় যুক্ত তা নিশ্চিত হলেও বাকিদের যুক্ত থাকার বিষয়টি পরিষ্কার নই। হাসপাতালের আয়াদের কাছ থেকে শুনে বাকিদের নাম দিয়েছি।’’ পুলিশ মূল অভিযুক্ত রাজ ইসলামকে গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। বেলা তিনটে নাগাদ ঘেরাও ওঠে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্ম বিরতি করেননি। অভিযোগ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসায় তাদের একাংশ ওয়ার্ডে ছিলেন না। তবে বাকিরা কাজ করছিলেন। পরে সকলে আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। অভিুক্তদের মধ্যে কয়েক জনের নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারও নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হলে অভিযোগকারীকে তা দেখতে বলা হয়েছে। কলেজ এবং হাসপাতাল চত্বরে নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে।’’
ধৃতের পরিবারের তরফে জানানো হয়, প্রতিষেধক দিতে দেরি হওয়া নিয়ে এক জুনিয়র চিকিৎসক হেনস্তা করছিলেন। সে কথা হাসপাতালের সুপারকেও জানানো হয়েছিল। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেছিলেন। মারধর কে করেছে তা তাদের জানা নেই।