ডুয়ার্সের চা বলয়ের প্রচলিত একটি কথা হল— গোড়ার মাটি ঝুরঝুরে হতে শুরু করলে সেই গাছ বাঁচে না। চা বলয়ের রাজনীতির প্রবণতাও তেমনিই, দাবি করেন ডান-বাম অভিজ্ঞ নেতারা। গত পঞ্চায়েত ভোটে চা বলয়ে পদ্ম ফুল মাথা তোলায় তাই অশনি সঙ্কেত দেখছেন তৃণমূল নেতারা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আগামী সপ্তাহে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই সফরে তিনি কোচবিহারের সঙ্গে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার কাজকর্মও খতিয়ে দেখবেন। সেখানে চা বলয়কে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, চা বলয়ে কেন বিজেপির শক্তি বাড়ছে, সেটাই এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রধান চিন্তার বিষয়। কোথায় কোন অসন্তোষ রয়েছে, তা খুঁজে বার করে সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। ফলে তাঁর সফরে চা অধ্যুষিত এলাকা প্রাধান্য পাবেই। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “আশা করছি, চা শ্রমিকদের জন্য কোনও ভাল ঘোষণাও থাকবে এই সফরে।’’
তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, বাম আমলের শেষের দিকে চা বলয়ে মাথা তুলতে শুরু করেছিল আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। তার পরেও বাম শিবিরের তৎপরতা দেখা যায়নি। যার পরিণতি চা বাগামে বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ধস। গত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে তৃণমূলের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক গড়ে উঠেছে চা বলয়ে। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার দুই লোকসভা আসনই লক্ষাধিক ভোটে জিতেছে তৃণমূল। সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পর তাই দল ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।
কিন্তু এই ‘সাফল্যে’ দু’টি কাঁটাও রয়েছে। যেমন, বিধানসভা ভোটে মাদারিহাট। এ বারে পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে তৃণমূল ভাল ফল করেছে। কিন্তু বিজেপির কাছে খুইয়েছে কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি। একটি জেলা পরিষদ আসনও জিতেছে বিজেপি। নাগরাকাটা, বীরপাড়া— সর্বত্রই পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির দাপট বেড়েছে।
ঘনঘন যাতায়াত শুরু হয়েছে বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতাদের। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহেরও ডুয়ার্সে আসার কথা। চা বলয়ে বিজেপির উত্থানে তৃণমূলের অন্দরে ঝড় ওঠে। কুমারগ্রামের বিধায়ক জেমস কুজুরকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। দলের সব নেতাকে বাগানে গিয়ে জনসংযোগ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ বারে মুখ্যমন্ত্রীর সফরে কতটা ঠিক হয় পরিস্থিতি, সে দিকেই নজর সকলের।