স্বস্তি: হাসপাতালে সালমা। পাশে সেই কয়েন। নিজস্ব চিত্র
দুপুরের খাওয়ার পরে মা ঘরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই দেড় বছরের ভাই সালিমকে নিয়ে বাড়ির দাওয়ায় খেলতে শুরু করে সাড়ে পাঁচ বছরের সালমা আফরোজ। হঠাৎ জেলি চকলেট খাওয়ার ইচ্ছে হয় তার। মা তখন আধঘুমে। মায়ের কাছ থেকে এক টাকার কয়েনও চেয়ে নেয় সে। তা নিয়ে যাচ্ছিল বাড়ির পাশেই চকলেটের দোকানে। কিন্তু দোকানে না গিয়ে কী মনে করে কয়েনটি নিজেই খেয়ে নেয় সে। অস্বস্তি শুরু হলে ঘরে দৌড়ে গিয়ে মাকে জানায় সে কথা। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। শেষপর্যন্ত অবশ্য বৃহস্পতিবার কয়েনটি বার করেন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
বুধবারের এই ঘটনা পুরাতন মালদহের যাত্রাডাঙার উত্তরপাড়ার। কয়েন খেয়ে ফেলে সালমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মা যূথিকা খাতুনের চিত্কারে লোকজন ছুটে আসেন। কয়েকজন কয়েনটি গলা থেকে বার করারও চেষ্টা করেন। পুরাতন মালদহের বেসরকারি এক স্কুলের এলকেজি-র ছাত্রী সালমাকে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি করেন স্থানীয়েরাই। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এক্স-রে করে দেখা যায়, কয়েনটি খাদ্যনালীতে আটকে রয়েছে। হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকেরা বুধবার রাতেই কয়েনটি বার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জানা গিয়েছে, দুপুরে সালমা বেশি খাবার খাওয়ায় ঝুঁকি নেননি তাঁরা।
তবে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে সালমাকে অজ্ঞান করে, তার পরে ইসোফেগোস্কপ যন্ত্রের সাহায্যে তাঁর খাদ্যনালীতে আটকে যাওয়া এক টাকার কয়েনটি বার করেন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অতীশ হালদারের নেতৃত্বে চিকিত্সকদের একটি দল। পরে অতীশবাবু বলেন, ‘‘কয়েনটি সালমার খাদ্যনালীতে আটকে গিয়েছিল। বুধবার রাতেই কয়েনটি বার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি দুপুরে বেশি খাবার খেয়ে নেওয়ায় সেই ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। এ দিন ইসোফেগোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে কয়েনটি বার করা হয়।’’ সালমা এখন সুস্থ। হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘এর আগেও বেশ কয়েকজন শিশু কেউ কয়েন, কেউ অন্যান্য ধাতব জিনিসপত্র খেয়ে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। সকলকেই সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো গিয়েছে।’’
গলা থেকে কয়েন বার হওয়ায় স্বস্তিতে মা যূথিকা। হাসপাতালের ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে মেয়েকে নিয়ে রয়েছেন। জানালেন, মেয়ে জেলি চকলেট খাওয়ার জন্য মাত্র এক টাকা চেয়েছিল। ঘরে থাকা কয়েনটি ওর হাতে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ে চকলেট না কিনে যে খেয়ে ফেলবে, ভাবতেই পারিনি। সালমার বাবা হাসিউর রহমান বলেন, ‘‘তখন বাড়িতে ছিলাম না। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসি।’’