ডেঙ্গি মোকাবিলায় জরুরি প্রশাসনিক বৈঠক
Dengue

এখনই ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা মারাত্মক হতে পারে, উদ্বেগ জেলাশাসকের 

মঙ্গলবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে দার্জিলিংঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলের সঙ্গে মেয়র গৌতম দেব-সহ সমস্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক হয়। পুরসভায় ওই বৈঠকে দার্জিলিঙের জেলাশাসক উপস্থিত ছিলেন ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু ও অর্জুন ভট্টাচার্য

শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪০
Share:

(বাঁ দিকে) ডেঙ্গি নিয়ে বৈঠক শিলিগুড়ি পুরসভায়। মশারি টাঙিয়ে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্তকে। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে (ডান দিকে)। ছবি: বিনোদ দাস ও সন্দীপ পাল।

ডেঙ্গি পরিস্থিতি বাড়তে থাকলেও শিলিগুড়ি শহরে সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে সে বিষয়ে জানান দার্জিলিঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনও সময় সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

Advertisement

সোমবার মুখ্যসচিব বৈঠক করে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেন কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করার। মঙ্গলবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে দার্জিলিংঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলের সঙ্গে মেয়র গৌতম দেব-সহ সমস্ত কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক হয়। পুরসভায় ওই বৈঠকে দার্জিলিঙের জেলাশাসক উপস্থিত ছিলেন ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে। এ দিনের বৈঠকে ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে যোগ দেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।

এ দিন আলোচনায় দার্জিলিঙের জেলাশাসক জানান, বিভিন্ন জায়গায় জমা জলে ডেঙ্গির বাহক মশার লার্ভা মেলার হার বাড়ছে। ডেঙ্গির রিপোর্টে লার্ভা মেলার হার জুলাই মাসে ০.৩৯ শতাংশ, অগস্টে ০.৪১, সেপ্টেম্বরে ০.৫৪। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এখন বেশি সংখ্যার পাত্রে লার্ভা মিলছে। ‘কনটেনার ইনডেক্স’ বাড়ার মানে, পরিস্থিতি যে কোনও সময় মারাত্মক হতে পারে। কোন ওয়ার্ডে কী রকম লার্ভা-ঘনত্ব, তা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাবেন। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দল খুব কম বাড়িতে যাচ্ছে এবং সমীক্ষার মানও ঠিক হচ্ছে না।’’ অগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসের পতঙ্গবিদদের সমীক্ষার রিপোর্টও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে চান জেলাশাসক।

Advertisement

মেয়র বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবের বৈঠকের পরবর্তী অংশ হিসাবে পুরসভাগুলোর সঙ্গে জেলাশাসকেরা বৈঠক করবেন। ঠিক হয়েছে, সপ্তাহে একদিন ‘ড্রাই ডে’ পালন করা হবে। কবে হবে, সেটা জানানো হবে। ১ অক্টোবর ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ পালন করা হবে। ভেক্টর কন্ট্রোল দলের কাজে আরও জোর দেওয়া হবে। পাত্র ভাল করে পরীক্ষা করা দেখা হবে।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, রেলের পরিত্যক্ত জায়গাগুলোর বিষয়ে জেলাশাসককে জানানো হবে। তিনি জানান, পরিত্যক্ত জমির জমা জল ও আবর্জনা কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা পরিষ্কার করলেও অনেক ক্ষেত্রে মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না।

মেয়রের বক্তব্য, গত বারের চেয়ে এ বছর সংক্রমণের হার অনেক কম হলেও আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই। কারণ, যে কোনও সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। তিনি জানান, ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিকজাত জিনিস বন্ধ করতে হবে। কারণ, তাতে জমে থাকা জলে মশা বাড়ছে। পুজোর সময়ও এ নিয়ে প্রচার করা হবে।

জলপাইগুড়ি জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারি নার্সিংহোমে ডেঙ্গি আক্রান্তদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর পাচ্ছে না।বেসরকারি প্যাথোলজিতে ডেঙ্গি পরীক্ষার তথ্যও জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে আসছে না বলে জানা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার প্রবণতা বিপদ বাড়াচ্ছে। জ্বর না কমায় পরে যখন কেউ সরকারি হাসপাতালে আসছেন, তখন
অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ মিলছে।

একই বাড়িতে বা একই এলাকায় একাধিক ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিললে সেই এলাকাগুলিতে ডেঙ্গির উৎস খুঁজে বার করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গির উৎস খুঁজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াটাই এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি জরুরি।’’

অন্যদিকে, মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ডেঙ্গি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’ যদিও এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন