মেডিক্যাল কলেজ পেয়ে খুশি দুই শহর

এইমস চেয়েছিল রায়গঞ্জ। তৎকালীন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এই নিয়ে দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবারও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এইমস চলে যায় কল্যাণীতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

এইমস চেয়েছিল রায়গঞ্জ। তৎকালীন সাংসদ দীপা দাশমুন্সি এই নিয়ে দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবারও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এইমস চলে যায় কল্যাণীতে। পরিবর্তে উত্তর দিনাজপুরের সদর শহরে তৈরি হয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। এ বারের বাজেটে এই শহরকে আরও এক ‘উপহার’ দিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর ঘোষণা যে পাঁচটি জেলা শহরে জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করা হবে, তার অন্যতম রায়গঞ্জ। উত্তরবঙ্গে কোচবিহার জেলা হাসপাতালও রয়েছে সেই তালিকায়। স্বাভাবিক ভাবেই দু’টি মেডিক্যাল কলেজ পেয়ে এই দু’জেলার তৃণমূল নেতৃত্বই খুশি।

Advertisement

ডাক্তারিতে আসন সংখ্যা বাড়ানোই এই নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলার মূল লক্ষ্য। সেটা বাজেট প্রস্তাবে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উত্তরের দুই জেলা মনে করছে, শুধু আসনই বাড়বে না, মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হওয়ার ফলে জেলা হাসপাতাল দু’টির পরিকাঠামোগত সংস্কারও হবে। দু’জায়গাতেই এখন অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় না। হয় ডাক্তার নেই, নয়তো যন্ত্রপাতি নেই বলে অনেক বিভাগ বন্ধ পড়ে থাকে। কোনও কোনও বিভাগ চালুই করা যায়নি। মেডিক্যাল কলেজ হলে দুই হাসপাতালেই নতুন যন্ত্রপাতি আসবে। তরুণ চিকিৎসকেরা যদি জেলাতেই হাউস সার্জেনশিপ করেন, তা হলে ডাক্তারও মিলবে।

রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ৪০০ শয্যা রয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে হাসপাতালে চালু হয়েছে ডিজিটাল এক্স-রে, ক্রিটিকাল কেয়ার, সিটিস্ক্যান, এসএনসিইউ এবং ডায়ালিসিস ইউনিট। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে সমস্ত বিভাগ মিলিয়ে ৬০ জন চিকিত্সক রয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হলে সেখানে ট্রমা কেয়ার, থ্যালাসেমিয়া ইউনিট-সহ আধুনিক চিকিত্সা পরিষেবার সমস্ত পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যাও বাড়তে পারে।

Advertisement

এই মুহূর্তে চিকিত্সকের অভাবে গত প্রায় এক বছর ধরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ইন্ডোর বিভাগ চালু করতে পারছে না স্বাস্থ্য দফতর। শুরু হয়েছে শুধু বহির্বিভাগ। এক বছর আগে রাজ্য সরকার রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির একটি প্রস্তাব আনে। সেই মতো উত্তর দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জমি খোঁজার নির্দেশও দেওয়া হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার দাবি, জেলা হাসপাতালের অবব্যহৃত জমি ও উদয়পুর এলাকার আর একটি সরকারি জমি চিহ্নিত করা রয়েছে। রাজ্য সরকার চাইলে ওই জমিতেই মেডিক্যাল কলেজ করতে পারবে।

জেলা কংগ্রেস কিন্তু এই সুযোগ এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির বিষয়টি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি। সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, ‘‘জেলাবাসী উন্নত চিকিত্সা পরিষেবা পাক, সেটা তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার কখনওই চায় না। রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ না করে রাজ্য সরকার সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের দাবি, শুধু ঘোষণা নয়, রাজ্যকে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে হবে। বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম বলেন, ‘‘আমরাও চাই রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ হোক। কিন্তু পরে যেন পরিষেবা বেহাল না হয়ে পড়ে।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, ‘‘বিরোধীরা যে উন্নয়ন চান না, তা তাঁরা এ দিন বাজেট বয়কট করেই প্রমাণ দিয়েছেন।’’

রাজ্য বাজেটে উত্তরের পাওনা

• জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, এমজেএন কোচবিহার, মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মা ও
শিশু হাব তৈরি

• কোচবিহার ও রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করা হবে

• ফাঁসিদেওয়া ব্লকে মুরগি ও শুয়োরের মাংসের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র

• চা শ্রমিকদের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অধীনে নতুন টি ডিরেক্টরেট হয়েছে

• চা শিল্পে আগামী অর্থবর্ষের জন্য শিক্ষা সেস মকুব

• দার্জিলিঙে বন দফতরের অধীনে ৩টি ইকো ট্যুরিজম স্পট

• শিলিগুড়ির পরে আলিপুরদুয়ারেও বাণিজ্য কর দফতর

রায়গঞ্জের মতো কোচবিহারও মেডিক্যাল কলেজ পেয়েছে। সেখানকার নাগরিক সংগঠনগুলি কিন্তু মনে করছে, এর ফলে জেলার রোগীদের আর অন্যত্র যেতে হবে না। দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, ‘‘জেলায় মেডিক্যাল কলেজ আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। মেডিক্যাল কলেজ হবে রোগীদের আরও বেশি করে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। কারণ, হাসপাতালের পরিকাঠামোরও তো উন্নতি হবে।’’ কোচবিহারের জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত রাহা হলেন, ‘‘আমাদের অনেক দিনের আশা ছিল, জেলা হাসপাতালের উন্নতি করা হবে। মেডিক্যাল কলেজ হলে উন্নতি হতে বাধ্য।’’ আর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা খুশি। প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।” তিনি জানান, জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রস্তাব নিঃসন্দেহে সরকারের বড় পদক্ষেপ।

বিরোধীরা একাংশ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কোচবিহার জেলায় ভাল ফল করেছে। এটা তারই ‘পুরস্কার’। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, এমনিতেই সাবেক ছিটমহল থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে জেলায় এখন কিছুটা সমস্যায় রয়েছে শাসকদল। বিজেপির বাড়বৃদ্ধিও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক ভাবে জমি দখল করার লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “যে সরকার কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটাতে পারছে না, তারা আদৌ মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করতে পারবে কি না, সেই সংশয় থাকছেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “শুধু ঘোষণাতেই আপ্লুত হওয়ার ব্যাপার নেই।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার সদরের এমজেএন হাসপাতালে ৫০০ শয্যা রয়েছে। চিকিৎসক রয়েছেন ৫৫ জন। এসএনসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালিসিস-সহ বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়া যায় এখানে। তবে রেডিওলজিস্ট আছেন মাত্র এক জন, অ্যানাসথ্রেটিস্টের সংখ্যা ৩। রোগীর চাপ অনুযায়ী ওই সংখ্যা বাড়ানো দরকার। কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মেডিক্যাল কলেজ হলে শয্যা সংখ্যার পাশাপাশি সমস্ত পরিষেবার সুবিধে বাড়বে। যা পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে কোচবিহারের জেলা হাসপাতালে তা ভাল ভাবে করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন