কোচবিহার রাজবাড়ি

আস্তরণ খুলে পড়ছে ফটকের

আস্তরণ খুলে পড়ছে সিংহদুয়ারের। তা নিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কোচবিহার রাজবাড়িতে। রাজ আমলে সিংহদুয়ারের প্রধান ফটক মূলত খোলা হত মহারাজার যাতায়াতের জন্য। অতিথি রাজা, উচ্চপদস্থ কর্তাদের জন্যও খোলা হত বিশালাকায় ওই প্রবেশদ্বার।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫২
Share:

রাজবাড়ির সিংহদুয়ারের বাঁ দিকের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

আস্তরণ খুলে পড়ছে সিংহদুয়ারের। তা নিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কোচবিহার রাজবাড়িতে।

Advertisement

রাজ আমলে সিংহদুয়ারের প্রধান ফটক মূলত খোলা হত মহারাজার যাতায়াতের জন্য। অতিথি রাজা, উচ্চপদস্থ কর্তাদের জন্যও খোলা হত বিশালাকায় ওই প্রবেশদ্বার। শতাব্দীপ্রাচীন সেই সিংহদুয়ায়ের প্রবেশ ফটক যথেচ্ছভাবে খোলার জেরে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন আগে রাজবাড়ির ওই ফটকের লোহার আস্তরণ খুলে পড়ার ঘটনার জেরে ওই ফটকের ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কি না সে ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠেছে।

ঘটনার সূত্রপাত সপ্তাহখানেক আগে। রাজবাড়িরই এক কর্মী জানান, সেই সময়ই সিংহদুয়ারের প্রধান ফটকের একটি লোহার আস্তরণ আচমকা খুলে পড়ে। তা জানাজানি হতেই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। কোচবিহারের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকে। শহরের বাসিন্দা, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ কেন্দ্রের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের ওই বিষয়গুলি দেখার দায়িত্ব।” পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের কলকাতা সার্কেলের অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রতাপ নায়েক এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “যা বলার সুপারিন্টেন্ডেন্ট বলবেন।” পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শান্তনু মাইতির মোবাইলে ফোন করা হলে জানানো হয়, তিনি অসুস্থ।

Advertisement

রাজবাড়ির ইতিহাস গবেষকদের মতে, ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে কোচবিহার কেশব রোড এলাকায় বিশালাকায় ওই রাজবাড়ি তৈরি হয়। লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের অনুকরণে তৈরি প্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ সিংহদুয়ারের মূল প্রবেশ ফটক। ফটকে নজর কাড়ছে সিংহ, হাতির মূর্তি। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “রাজাদের আমলেও ওই প্রবেশ ফটকটি নিয়ন্ত্রিতভাবে খোলা হত। কেবলমাত্র মহারাজা ছাড়া অতিথি রাজা, উচ্চপদস্থ কর্মীদের ক্ষেত্রে সেটি খোলা হত। এখন সে সবের বালাই নেই। যথেচ্ছভাবে ফটকটি খুলে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘খোলার কথা না হলেও প্রভাবশালীদের একটা ফোনেই ফটক খুলে দেওয়া হয়। এ ভাবে চলতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

এমন অভিযোগ শুনে উদ্বিগ্ন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ কর্তাদের অনেকেই। তাঁদেরই একজন, সমর ঘোষাল বলেন, “কোচবিহার রাজবাড়ি জাতীয় ঐতিহ্য। সেখানকার সব কিছুরই যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণ হওয়া কাম্য।” তিনি জানিয়েছেন, প্রাচীনত্বের কারণে, না রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আস্তরণ খুলেছে দেখা দরকার। কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, বিকল্প ফটক দিয়েই রাজ আমল থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল। এখনও তা রয়েছে। তাই কোনও নেতা, আমলার ফোনেই নিয়ম ভেঙে মূল ফটক খোলা না হয়, নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন