ফাইল চিত্র
ঘড়ির কাঁটা তখনও ভাল করে পাঁচটার ঘর ছোঁয়নি। কলকাতায় পথে পথে নেমে পড়ল পুলিশ। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর লোকজনকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে কঠোর হতেও দেখা গেল তাদের।
প্রায় ছ’শো কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ি শহরে কিন্তু অন্য ছবি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পাঁচটা বটেই, ছয় বা সাতটাতেও সে ভাবে নড়েচড়ে বসতে দেখা গেল না পুলিশকে। শহরের পথে তখন ছোট গাড়ি থেকে স্কুটি, মোটরবাইক, টোটো। যা দেখেশুনে কয়েকটি পাড়া থেকে ফোন গেল স্থানীয় থানাগুলিতে। তার পরে পথে বার হল পুলিশ কর্মীরা। ধীরে ধীরে পথ ফাঁকা করার ব্যবস্থা হল। কিছু ক্ষেত্রে তখন পুলিশকে তৎপর হয়ে লোকজনকে তাড়া করতেও দেখা গেল বলে দাবি। কিন্তু ততক্ষণে তো যা দেরি হওয়ার হয়ে গিয়েছে, বলছেন শিলিগুড়ির অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, পাঁচটা থেকে যেখানে লকডাউন হয়েছে, সেখানে শিলিগুড়ির পুলিশের কেন তিন ঘণ্টা লেগে গেল সক্রিয় হতে!
ডিসি সদর নিমা নরবু ভুটিয়া বলেন, ‘‘মাইকে প্রচার হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ করানো হয়েছে। আমরা রাস্তায় নজর রাখছি, কারা অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাত জনকে একসঙ্গে দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুলিশের এই বক্তব্য শুনে শিলিগুড়ির অনেকেই বলছেন, ‘‘সাত জনের কম লোক যদি রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, তা হলে কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? তা হলে লকডাউনের অর্থ কী রইল?’’ এই নিয়ে অবশ্য পুলিশ-প্রশাসন থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
শিলিগুড়িতে বিকেল পাঁচটার পরেও ছুটির আমেজে ঘুরতে দেখা গিয়েছে অনেককে। খালপাড়া বাজার এলাকায় বিকেলের পরে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সেখানে আড্ডা জমেছিল। ঠিক একই ছবি দেখা গিয়েছে, হিলকার্ট রোড, ক্ষুদিরামপল্লি, সেবক রোডের কিছুটা অংশে। এনজেপি গেটবাজারের মতো বিভিন্ন এলাকায় বিকেল পাঁচটার পরেও খোলা রয়েছে চায়ের দোকান, রাস্তার ধারের খাবারের দোকানপাট। সেগুলি ঘিরেও আড্ডা জমে উঠতে দেখা গিয়েছে।
যদিও রাত আটটার পরে থেকে ছবিটা একটু বদলায়। লকডাউনের পরেও দোকান খোলা রাখার অভিযোগে শিলিগুড়ির হাসপাতাল মোড় থেকে আটক করা হয় এক ব্যবসায়ীকে। সূর্যসেন কলেজ মাঠ, বাঘাযতীন পার্ক, ডাবগ্রাম, ইস্টার্ন বাইপাসে পুলিশের অভিযান চলে। মহাত্মা গাঁধী মোড় আর হাসমিচকে গাড়ি, বাইক দেখলেই দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সতর্ক করা হয়।
শহরের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ক্ষতি হবে জেনেও সংক্রমণ রুখতে পুরোপুরি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু লকডাউনে যা যা করণীয় তা যদি না করা হয় তাহলে এই সিদ্ধান্তে ফল কিছু হবে না বলে মনে করছেন শহরবাসীর একটি বড় অংশ।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘এই লড়াই এমন একটা অজানা রোগের বিরুদ্ধে, তা হয়তো অনেকে বুঝছেনই না। এটা পুলিশ এবং প্রশাসনকে প্রথম থেকেই বোঝাতে হবে। তা না হলে ভিড়ের এই প্রবণতা আগামী দিনে বাড়তে থাকবে। বাড়তে থাকবে সংক্রমণের মাত্রাও।’’ শহরবাসীর দাবি, তিনবেলা করে পুলিশ রাস্তায় নেমে যাচাই করুক কে অযথা আড্ডা মারছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে।