ফাইল চিত্র
মালদহ জেলা জুড়েই চলছে লকডাউন। কিন্তু ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের স্ক্রিনিংয়ের পর হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হলেও তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মানছেন না বলে অভিযোগ। অভিযোগ, তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যেমন থাকছেন তেমনি লকডাউনকে উপেক্ষা করে বাইরে ঘোরাফেরা, এমনকি চায়ের দোকানে বসে ঠেকও দিচ্ছেন। জেলার কালিয়াচক ও হরিশ্চন্দ্রপুরে এই অভিযোগ বেশি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলির বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তারা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা হোম কোয়রান্টিনে পাঠানো এমন শ্রমিকদের কাজ-কারবার নজরে এসেছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের। আর তাই, এবার থেকে এই প্রবণতা রুখতে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশ নজরদারি শুরু করেছে গ্রামে গ্রামে। তাদের হাতে ব্লকের হোম কোয়রান্টিনে থাকা শ্রমিকদের নামের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা নিয়েই তাঁরা খোঁজখবর শুরু করেছেন। অভিযোগ পেলেই সেই হোম কোয়রান্টিনে থাকা সেই শ্রমিককে তুলে এনে রাখা হবে হাসপাতালের কোয়রান্টিনে। এজন্য জেলার থানাগুলিতে দু-একটি করে গাড়ি আলাদাভাবে হাইপোক্লোরাইড সলিউশন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে রাখা আছে। এছাড়া, ওই শ্রমিকদের রাখতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি আরও কয়েকটি জায়গা কোয়রান্টিনের জন্য চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোয়রান্টিনে শয্যার সংখ্যা ৫০টি রয়েছে। ইংরেজবাজার শহরের বাঁধ রোড সংলগ্ন যুব আবাসের একটি ফ্লোর, সুজাপুর ও সামসি হাসপাতালেও কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’’
কালিয়াচকের তিনটি ব্লক ছাড়াও হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া, ইংরেজবাজার, মানিকচক ব্লকগুলির অসংখ্য বাসিন্দা ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যান। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই ভিন্ রাজ্যে থাকা ওই শ্রমিকরা মালদহে ফিরতে শুরু করেছেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ক্রিনিংয়ের পর তাঁদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এখন পর্যন্ত যতজন পরিযায়ী শ্রমিকদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩০৩ জনকে ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মতো বাড়িতে আলাদা একটি ঘরে তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের ওপর নজরদারি রাখবেন। কিন্তু অভিযোগ, সে সব না মেনে বেশিরভাগ শ্রমিক পরিবারের সঙ্গেই মেলামেশা করছেন। তাঁরা গ্রামের বিভিন্ন ঠেকে গিয়ে আড্ডাও দিচ্ছেন। সূত্রে খবর, কালিয়াচক-১ ব্লকের আলিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরগাউড়ি, ছড়কা টোলা, নয়াবস্তি, কালিয়াচক- ১ পঞ্চায়েতের রাজনগর, জোতকরম, আলিপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা, হরিশ্চন্দ্রপুরের একাধিক এলাকায় হোম কোয়রান্টিনে থাকা শ্রমিকরা বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। কালিয়াচক থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, হোম কোয়রান্টিনে থাকা শ্রমিকদের ব্যাপারে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ জানা গিয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিশরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এখন থেকে তাঁদের বাইরে দেখলেই তুলে নিয়ে এসে হাসপাতালে কোয়রান্টিনে রাখা হবে। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ মানছেন না, তাঁদের এনে হাসপাতালে কোয়রান্টিনে ১৪ দিন রাখা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে সচেতনতা প্রচারও চালান হচ্ছে।’’