Coronavirus in West Bengal

সিদ্ধান্ত মানবিক নয়, মন্তব্য স্ত্রীর

সিএমওএইচের স্ত্রী-ই নন, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যেই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পথে নেমেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২০ ০৭:০৫
Share:

বিক্ষোভ: মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলির প্রতিবাদে স্বাস্থ্যকর্মীরা। বৃহস্পতিবার কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

এই সময় বদলি মানে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়া— সিএমওএইচের বদলি’র বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই এমন অভিযোগ তুললেন কোচবিহার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক। বুধবার রাতেই ফেসবুক পোস্ট করে তিনি ওই বদলির বিরোধিতা করেন। ওই চিকিৎসকের নাম শিখা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি কোচবিহারের সিএমওএইচের স্ত্রী সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই করোনার সময়ে সিএমওএইচদের ট্রান্সফার করে করোনা আটকানো যাবে না। অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত সরকারের। প্রতিবাদ করছি।’ তিনি সেখানেই থেমে থাকেননি, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেই জানিয়েছেন, তিনি তাঁর স্বামীকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। এর মধ্যে জেলার ডেপুটি সিএমওএইচকে এখনই দায়িত্ব নিতে বলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

অবশ্য শুধু সিএমওএইচের স্ত্রী-ই নন, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যেই সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পথে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যকর্মীরা কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ানের দফতরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে সেখানে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “সিএমওএইচ খুব ভাল মানুষ। দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। সে জন্য পদোন্নতি করে তাঁর দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই।” কোচবিহারের জেলাশাসক বুধবারই জানিয়েছিলেন, রুটিন বদলি হয়েছে। রাজ্যের আরও স্বাস্থ্যকর্তার বদলি করা হয়েছে। সিএমওএইচ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।”

বুধবার সন্ধ্যায় সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেই জানা যায়, কোচবিহারের সিএমওএইচকে এডিএইচএস পদে উত্তরকন্যায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে দার্জিলিং জেলায় থেকে উত্তরকন্যার দায়িত্ব সামলাতে হবে। কোচবিহারে স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেব রণজিৎ ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তা জানাজানি হতেই জেলা জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। গত কয়েক দিন ধরেই করোনা আক্রান্ত বাড়ছে কোচবিহারে। একসময়ের গ্রিন জ়োনে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪০ জন। অনেকেই অভিযোগ করেন, সে জন্যেই সিএমওএইচের উপরে দায় চাপিয়ে তাঁকে বদলি করা হল। এ ছাড়া করোনা আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ হওয়াতেও তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, করোনা পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবিলা করছেন সিএমওএইচ। যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। সেখানে সিএমওএইচের কিছু করার নেই। চিকিৎসা বা কোয়রান্টিন সেন্টারে তাঁদের দেখাশোনার কাজ ঠিক ভাবেই হচ্ছিল। স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, “রুটিন বদলি হতেই পারে। কিন্তু এটা তার সঠিক সময় নয়।”

Advertisement

একই বক্তব্য শোনা গিয়েছে সিএমওএইচের স্ত্রীর শিখাদেবীর মুখেও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই সময়ে বদলি মানে জেলাকে আরও কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। যাঁকে বদলি করা হল, তাঁর শারীরিক নানা অসুবিধে রয়েছে। বাইপাস হয়েছে। সুগার-প্রেসার আছে। এই সময়ে বাইরে গিয়ে হোটেলে থাকা তাঁর পক্ষে বিপজ্জনক।’’ তিনি আরও বলেন, “এটা একটা খুব খারাপ চক্রান্ত হয়েছে। বিপদের মুখে ঠেলে দিতেই বদলি করা হয়েছে। জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থারও কোমর ভেঙে দেওয়া হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন