coronavirus

ফুসফুস পাল্টাতে পরামর্শ! বিতর্ক

চিকিৎসার নামে বাইরে থেকে রোগীর পরিবারকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনে দিতে হয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৬:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

রোগীর আত্মীয়: হ্যালো, ডাক্তার বলছেন?

Advertisement

চিকিৎসক: হ্যাঁ, বলছি।

রোগীর আত্মীয়: আমি প্রধাননগরের... নার্সিংহোমের... নম্বর বেডের রোগীর বাড়ির লোক বলছি। আমি হোম কোয়রান্টিনে আছি। রোগীর খবর পাচ্ছি না। যেতেও পারছি না। কী অবস্থা একটু বলবেন? রোগীর স্ত্রীও তো আক্রান্ত।

Advertisement

চিকিৎসক: অবস্থা ভাল নয়। অক্সিজেন নেমে যাচ্ছে। ফুসফুসের অবস্থা বাজে। বাইপ্যাপ লাগিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন সত্তরে নেমে যাচ্ছে। রেমডেসিভির ইঞ্জেকশনও কাজ করছে না মনে হয়।

রোগীর আত্মীয়: আমি কী করব! একটু কিছু বলুন। কিছুই বুঝতে পারছি না।

চিকিৎসক: যা করার আমি করছি। আর ফুসফুসটা বদল করতে হবে। এমন খারাপ ফুসফুস যে, আর কোনও বিকল্প পথ নেই।

রোগীর আত্মীয়: কিছুই হচ্ছে না? ডাক্তারবাবু, দেখুন।

চিকিৎসক: ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিয়ে কী হবে দেখতে হবে। স্টেরয়েড, রক্ত পাতলা করার ওষুধ দিচ্ছি। দেখি শেষ চেষ্টা করে।

ফুসফুস বদল করলে করোনায় অসুস্থ এক রোগীর সমস্যা মিটবে বলে পরিজনের কাছে দাবি করলেন এক ব্যক্তি। দাবি করা হচ্ছে, শহরের এক নার্সিংহোমের চিকিৎসকই সংশ্লিষ্ট রোগীর আত্মীয়ের কাছে এই দাবি করেছেন।

এই কথোপকথনের একটি অডিয়ো ভাইরাল (আনন্দবাজার যার সত্যতা যাচাই করেনি) হয়েছে। যা শুনে বিস্মিত শহরের চিকিৎসকেরা। কারণ, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের চিকিৎসার লাইসেন্স, পরিকাঠামো, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ এবং সুস্থতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে।

সম্প্রতি এমনই ঘটনা সামনে এসেছে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে। সরকারি আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, করোনার চিকিৎসার নামে রোগীর পরিজনদের মধ্যে ভয়, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে টাকা লুঠের চেষ্টা চলছে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমগুলির একাংশে। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘কেন ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কথা বলছেন বলতে পারব না। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরাই ভাল বুঝবেন। করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের চিকিৎসার কারও দরকার হয়েছে বলে জানা নেই।’’

চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁদের ধারণা, বাইরের কোনও নার্সিংহোম যেখানে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে তার সঙ্গে এখানকার চিকিৎসকদের যোগাযোগ হয়েছে। চিকিৎসার নামে সেখানে নিয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করার চেষ্টা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসক তথা কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্য কল্যাণ খান বলেন, ‘‘করোনার চিকিৎসায় ফুসফুস বদলানোর সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে বলে জানা নেই। কোভিড প্রোটোকলেও সে ব্যাপারে কিছু বলা নেই। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। মানুষের কঠিন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে, ভয় দেখিয়ে অর্থ লুঠ করার চেষ্টা হলে তা খুবই দুর্ভাগ্যের।’’

অভিযোগ, ভাইরাল অডিয়োটি যে রোগীকে কেন্দ্র করে, তাঁর চিকিৎসার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বিল করা হলেও রাতে খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়েছিল রোগীর কেবিনে। তাতে কখনও ঠিক মতো অক্সিজেনও মেলেনি। চিকিৎসার নামে বাইরে থেকে রোগীর পরিবারকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ, ইঞ্জেকশন কিনে দিতে হয়েছে। তা কতটা ব্যবহার হয়েছে তা নিয়েও সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে সহৃদয় এক ব্যক্তিকে পরিস্থিতির কথা জানানোর পর রোগীকে সিসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, শেষ সাতদিন রোগীর কোনও চিকিৎসাই হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি রোগীকে। অথচ প্রধাননগরের ওই নার্সিংহোম বহু লক্ষ টাকার বিল কিন্তু পুরোটাই বুঝে নিয়েছে।

(সহ প্রতিবেদক: সৌমিত্র কুণ্ডু)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement