দুইদিন দু’ঘণ্টা, ‘দেশে’ আসতে বরাদ্দ এটুকুই

সপ্তাহে দু’দিন দুই ঘণ্টা করে! এখন সীমান্তের ছয় গ্রামের বাসিন্দাদের ‘দেশে’র সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ এইটুকুই। 

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৬:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

সপ্তাহে দু’দিন দুই ঘণ্টা করে! এখন সীমান্তের ছয় গ্রামের বাসিন্দাদের ‘দেশে’র সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ এইটুকুই।

Advertisement

লকডাউন শুরুর পরেই তালা পড়েছে কাঁটাতারের বেড়ার মাঝে থাকা লোহার গেটে। বেড়ার ওপারে যে গ্রামগুলি রয়েছে সেগুলির বাসিন্দারা ভারতের নাগরিক। কিন্তু এখন তাঁদের জন্যও গেট বন্ধ। সপ্তাহে দু’দিন দুঘণ্টার জন্য মূল ভূখণ্ডে এসে বাজার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তখন সঙ্গে রাখতে হচ্ছে নাগরিকত্বের প্রমাণ। বাকিদিন কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তবেই মূল ভূখণ্ডে আসার অনুমতি মিলছে।

জলপাইগুড়ি শহর ছাড়িয়ে মসৃণ পিচ রাস্তা ধরে বেরুবাড়ি পৌঁছন যায়। নগর বেরুবাড়ির গ্রামের রাস্তা ধরে এগোলে দেখা যায় তারকাঁটার বেড়া। ছোট পাট গাছ, ভুট্টার খেত, বোরো ধানের জমির ওপারে কাঁটাতার বসানো। বেড়ার ওপারে দরমা-বেড়ার সারি সারি বাড়ি, ধান খেত, ভুট্টাবাড়ি। গ্রাম্য ভাষায় খেতকে বাড়িও বলে। যেমন ভুট্টাবাড়ি, আলুবাড়ি। শনিবার দুপুরে কচি ধান হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে।

Advertisement

এ পার থেকে বেড়ার তারজালির ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে শার্ট-লুঙ্গি পরে দাঁড়িয়ে এক যুবক। এপারের এক পরিচিতের থেকে ফোন নম্বর পাওয়া গেল তাঁর। যুবকের নাম মসিউল হক। ফোনে বললেন, “এখন আর সবসময়ে দেশে ঢুকতে পারি না। বুধ আর শনিবার হাটের দিনে দুঘণ্টার জন্য বাজার করতে যেতে দেয় শুধু।”

বিএসএফ সূত্রে দাবি, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাতেই এই ব্যবস্থা। জলপাইগুড়ির খুদিপাড়া, বাঙালপাড়া, হিন্দুপাড়া, অন্তুপাড়া, খেকিরডাঙা, সিপাইপাড়া গ্রামগুলি কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে। এই গ্রামের পরেই বাংলাদেশ। এই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের যোগাযোগ, মেলামেশাও রয়েছে বলে বিএসএফের দাবি। তাই তাদের আশঙ্কা, অবাধ যাতায়াতের সুযোগ দিলে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের গ্রামগুলিতে কোনও বাজার নেই। সিপাইপাড়ার বাসিন্দা মনসুর আলি বললেন, “একটা মুরগির ডিম কিনতে হলেও বেড়া পার হয়ে বেরুবাড়ি যেতে হয়। ওইটুকু সময়ে কি সারা সপ্তাহের জিনিস আনা যায়।”

স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত গেট খোলা থাকত। রাত ৯টার পর থেকে আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও দিনের অন্য সময় কোনও কাগজ ছাড়াই যাতায়াত করা যেত।

এক বাসিন্দার কথায়, “নিজের দেশে বাজার করতে গেলেও এখন পকেটে আধার কার্ড রাখতে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন