বাড়িতে ঢুকে দম্পতিকে কুপিয়ে লুঠ গেটবাজারে

দরজার লক ভেঙে বাড়ির ভিতর ঢুকে ঘণ্টাখানেক দাপিয়ে বেড়ানোর পর এক দম্পতিকে কুপিয়ে পালাল এক দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার ভোররাতে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার ওল্ড মাটিগাড়া রোড়ের জংশন গেটবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:১৯
Share:

জখম দম্পতি।—নিজস্ব চিত্র

দরজার লক ভেঙে বাড়ির ভিতর ঢুকে ঘণ্টাখানেক দাপিয়ে বেড়ানোর পর এক দম্পতিকে কুপিয়ে পালাল এক দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার ভোররাতে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার ওল্ড মাটিগাড়া রোড়ের জংশন গেটবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এই নিয়ে গত কয়েকদিনের জংশন এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনার জেরে প্রধাননগর থানার পুলিশের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিরাতে এক দফায় পুলিশ ভ্যান এসে ঘুরে চলে যায়। সকাল অবধি আর ভ্যানের দেখা মেলে না। এর ফলেই সন্ধ্যার পর থেকে দুষ্কৃতী, মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্য শুরু হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, মধুসূদন দত্ত নামে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির পেটে ও পিঠে পাঁচটি সেলাই পড়েছে। ঘটনার পরেই প্রতিবেশী এবং আত্মীয়েরা গুরুতর জখম ওই দম্পতিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী শঙ্করীদেবীর ডান হাতে কবজিতে কোপানো হয়েছে। ওই দুষ্কৃতী পালানোর আগে দম্পতির বাড়ির সামনের অংশে থাকা স্টেশনারি দোকান থেকে হাজার দুয়েক টাকা, কিছু জিনিসপত্রও নিয়ে পালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Advertisement

জংশন গেটবাজার মোড়ের পুরানো লোহার সেতুর পাশেই মদুসূদনবাবুর স্টেশনারি দোকান। পিছনেই টিনের বাড়ি। রাতে বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী একাই ছিলেন। একমাত্র কলেজ পড়ুয়া ছেলে, অনির্বাণ পাশের পাড়ায় বরাবর রাতে দাদুর বাড়িতেই ঘুমোন। গেটবাজারের মূল রাস্তা থেকে বাড়িতে ঢোকার গেট। দোকানের পিছনে বড় টিনের একটিই বড় ঘর, তার পরে বারান্দা, রান্নাঘর, বাথরুম রয়েছে। তার পাশে বাণীমন্দির রেল স্কুলের সীমানা পাঁচিল। স্কুলের ওই পাশের অংশটি জঙ্গল, আগাছায় ভরা। সেখান দিয়ে দেওয়াল টপকে সোজা জংশনের রাস্তায় চলে যাওয়া য়ায়। দুষ্কৃতীটি ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ির পিছনের দরজার লক ভেঙে ঢুকেছিল বলে পরিবারের অনুমান। ভোরে টেলিফোন করার পর পুলিশ ভ্যান গিয়ে ঘুরে আসে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

রাতে খাবারের পর গল্পগুজব করে দম্পতি শুয়ে পড়েন। ঘরে হালকা আলোর নাইট ল্যাম্প জ্বলছিল। রাত ৩টা নাগাদ মধুসূদনবাবু ঘরের স্টিলের আলমারি খোলার চেষ্টার আওয়াজ পান। তিনি ঘুম থেকে উঠে বসতেই দুষ্কৃতী দম্পতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। মধুসূদনবাবুর কথায়, ‘‘আলমারির আওয়াজ পেয়ে বিছানায় উঠে বসতেই একটি ছেলেকে দেখি। হাতে বড় মাপের ধারাল অস্ত্র। চুপ করে বসে থাকতে বলে, নইলে মেরে ফেলবে বলে। কোনওক্রমে বাইরে বার করে এগিয়ে যেতেই পেটে কোপ দেয়। স্ত্রী আমাকে বাঁচাতে এগোতেই ওর হাতেও কোপ মারে।’’ তাঁর স্ত্রী শঙ্করীদেবী বলেন, ‘‘আমাকে মেরেই পিছনের দরজা দিয়ে দেওয়াল টপকে স্কুলের ভিতর ঢুকে পড়ে ওই ছেলেটা। মোবাইলে ফোন করে আমি আমার ছেলেকে ডাকি। সেই সময় টের পাই, দোকান তছনছ করা হচ্ছে। আর একটু হলে হয়ত প্রাণেই মেরে ফেলত।’’

Advertisement

সকালে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে যান বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি মনোরঞ্জন মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায় চৌধুরী। ওই দম্পতির ছেলে অনির্বাণ বিজেপি কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘প্রধাননগর থানায় দীর্ঘদিন ধরে আইসি পদ খালি। এলাকায় দিনের পর দিন দুষ্কৃতীদের দাপট বাড়ছে। পুলিশের নজরদারি নেই বললেই চলে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা উৎপলা দে, সুনীতা ঝা, হারু সিংহ রায়’রা বলেন, ‘‘সন্ধ্যার হলেই বিভিন্ন গলিতে নেশার ঠেক শুরু হচ্ছে। কিছু বললে উল্টে ভয় দেখাচ্ছে। নদীর চরে বাইরের লোকজনের আনাগোনা চলছে। কয়েকদিন আগেই একটি মুদির দোকান, একটি কেবলের অফিসে দোকান ভেঙে চুরি হয়েছে। কেউ ধরা পড়েনি। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’’ স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলর মালতি রায়’ও একই অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নজরদারি বাড়াতে স্থানীয় থানাকে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন