দেওয়ালে ফাটল, শঙ্কায় বহুতলবাসী

ভূমিকম্পের আতঙ্কে কাবু জলপাইগুড়ি শহরে চোখে ঘুম নেই বহুতলের বাসিন্দাদের। বাড়ির দেওয়ালে বিপজ্জনক ফাটল, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাঁদের কপালে। ক্রমশ প্রোমোটারদের দখলে চলে যাওয়া প্রাচীন শহরে প্রশ্ন উঠেছে, বহুতল নির্মাণে ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা আদৌ আছে তো? পুরসভার কর্তারা আশ্বস্ত করলেও স্বস্তি ফিরছে কোথায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৬
Share:

মালবাজারে ধসল দেওয়াল। —নিজস্ব চিত্র।

ভূমিকম্পের আতঙ্কে কাবু জলপাইগুড়ি শহরে চোখে ঘুম নেই বহুতলের বাসিন্দাদের। বাড়ির দেওয়ালে বিপজ্জনক ফাটল, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাঁদের কপালে। ক্রমশ প্রোমোটারদের দখলে চলে যাওয়া প্রাচীন শহরে প্রশ্ন উঠেছে, বহুতল নির্মাণে ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা আদৌ আছে তো? পুরসভার কর্তারা আশ্বস্ত করলেও স্বস্তি ফিরছে কোথায়।

Advertisement

শনিবার সকাল থেকেই আতঙ্কের শুরু হয়েছে। প্রতি দিন ঘরবাড়ি দুলতে দেখে এখন সামান্য শব্দেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাসিন্দারা। বহুতল থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন। চোখমুখে একটাই প্রশ্ন, উঁচু বাড়িতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকা কতটা নিরাপদ। যেমন ডিবিসি রোড লাগোয়া বহুতলের বাসিন্দা জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে ফ্ল্যাট কিনেছি। কিন্তু ঘুমোতে পারছি কোথায়! প্রত্যেকের একই দশা হয়েছে। জানি না কি হবে!”

যদিও জলপাইগুড়ি শহরে ভূমিকম্পের আতঙ্ক নতুন কিছু নয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সুবীর সরকার জানান, জলপাইগুড়ি-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। এখানে বার বার বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছে। অভিজ্ঞতা থেকে প্রাচীন মানুষ নিরাপত্তার পথ খুঁজে নিয়েছেন। বাড়ি তৈরিতে ইট, পাথর ব্যবহার করেনি। কাঠ, বাঁশ, খড়ের চল ছিল। পরবর্তী কালে প্রাচীন নির্মাণ শৈলী পাল্টে কংক্রিটের গুরুত্ব বাড়ে। জানা গিয়েছে, ১৯৭১ সালেও জলপাইগুড়ি জেলায় ৬১ শতাংশ বাড়ির দেওয়াল তৈরি হত কাঠ, বাঁশ, চাটাইয়ের উপরে মাটি অথবা সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে। চাল থাকত টিনের। ১৯৮০ সাল থেকে স্থাপত্যের ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। কাঠ, বাঁশ, চাটাইয়ের জায়গা দখল করতে শুরু করে কংক্রিট। শহর থেকে একে একে উধাও হতে থাকে কাঠের বাড়ি। ২০০০ সাল থেকে শহরে মাথা তুলতে শুরু করে বহুতল। ইট, চুন, সুরকি এবং টিনের চাল দেওয়া কাঠ, বাঁশ, চাটাই দিয়ে তৈরি পুরনো বাড়িগুলি প্রোমোটারদের দখলে চলে যায়।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের মধ্যে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি শহরে দু’শো বহুতল গড়ে ওঠে। প্রশ্ন উঠেছে, ওই সমস্ত ফ্ল্যাট নির্মাণের সময় কি ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার যশোপ্রকাশ দেবদাস বলেন, “নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প নিরোধক ব্যবস্থা দেখে প্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হলে বহুতলে ফাটল ধরে কেমন করে? তবে কি প্রোমোটারেরা প্ল্যান অনুমোদনের পরে সেই মতো কাজ করছেন না? জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ার অরিন্দম ভট্টাচার্য জানান, দেওয়ালে ফাটল এমন কিছু নয়। দেখতে হবে ছাদ, স্তম্ভ এবং কলামে চিড় ধরেছে কিনা। তিনি বলেন, “ভূমিকম্পে শহরে বহুতল ভেঙে পড়ার খবর নেই। সেই হিসেবে বলা যেতে পারে এখানে বাড়ি নির্মাণের সময় ভূমিকম্প নিরোধক নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে।” কী সেই ভূমিকম্প নিরোধক নিয়ম?

নির্মাণ ব্যবসায়ী শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ছোটখাটো পুকুরের আয়তনে মাটি তুলে গভীর থেকে মাপ মতো লোহার রডের জাল বিছিয়ে ভিত গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই পদ্ধতি ‘র‍্যাম্প ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচিত। ওই পদ্ধতি মেনে চলা হলে ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শহরের অন্তত ১২টি বহুতলে ফাটল ধরার খবর মিলেছে। কিন্তু কোনও বাড়ি ভেঙে পড়েনি। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের নির্দেশ মেনে বাড়ির প্ল্যান অনুমোদনের কারণে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।”

অন্য দিকে, সোমবার সন্ধের কম্পনে মালবাজার মহকুমাশাসকের দফতরের চত্বরে পূর্তদফতরের গুদামের ৩০ মিটার দেওয়াল ধসে পড়ে যায়। দেওয়ালটি তিন দশক পুরনো বলে এ দিনের সামান্য কম্পনেই সেটি পড়ে গিয়েছে বলে পূর্তদফতরের কর্মীরা জানান। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতিও। তবে এই দেওয়ালটি ছাড়া শেষ কম্পনে আর কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি বলে জানান মহকুমাশাসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন