পরিদর্শন: শিলিগুড়ি হাসপাতালে গৌতম। —নিজস্ব চিত্র।
মন্ত্রীর পরিদর্শনে যেতেই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সরব হলেন রোগীদের একাংশ।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি হাসপাতালের ডেঙ্গি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি যেতেই রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অনেকেই অভিযোগ করেন, আয়াদের টাকা না দিলে পরিষেবা মিলছে না।
লক্ষ্মী শর্মা, সাকিনা খাতুন, সুপ্রিয়া রায়ের মতো রোগীর আত্মীয়রা অভিযোগ করেন, ‘‘নার্সদের কাছে স্যালাইন লাগানোর জন্য বললে তাঁরা জবাব দেন শয্যায় থাকুন, আয়ারা গিয়ে করে দেবেন। ওষুধ কখন খাবেন জিজ্ঞাসা করলে জানানো হয় যে আয়া রয়েছেন তিনি বলে দেবেন। আর এর জন্য দিনে ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে আয়াদের।’’ কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে প্লেটলেট কাউন্টের রিপোর্টের সঙ্গে একই দিনে বাইরের প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে করা রিপোর্টের অনেক ফারাক থাকছে বলেও অভিযোগ করেন। বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দেন।
হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল অবশ্য আয়া রাখার জন্য রোগীর পরিবারকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির এক জনকে রোগীর সঙ্গে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। তা না করে অনেকেই আয়া রাখছেন। তবে স্যালাইন নার্সরা লাগিয়ে দেন।’’
অভিযোগ উঠেছে, জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ওয়ার্ডের মধ্যেই লাইন দিয়ে রক্ত দিতে হচ্ছে। শয্যার গিয়ে রক্ত নেওয়া হচ্ছে না। সুপারের কথায়, ‘‘কোথায় কোন রোগী রয়েছে খুঁজতে সময় লাগছে বলেই এই ভাবে করা হচ্ছে।’’ রোগীদের অনেকেই কিন্তু এ ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে রক্ত দিতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই হাসপাতালের রোগীরা সুষ্ঠু পরিষেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তুলেছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও।
এ দিন পর্যটনমন্ত্রী যখন হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তখন মেডিসিন বিভাগের মেঝেতে রোগী থাকলেও করিডরে রোগী ছিল না। তাতেই রোগীর সংখ্যা গত দু’দিনে কিছুটা কমছে বলে মন্ত্রী জানান। তবে চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, সকালে প্রতিদিনই রোগীদের অনেককে ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিকেলের মধ্যে ফের নতুন জ্বরের রোগী ভর্তি হয়ে করিডর ভরে যাচ্ছে।
তা ছাড়া হাসপাতালে পরিষেবা পেতেও জ্বরের রোগী এবং তার পরিবারকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এ দিন পর্যটনমন্ত্রী পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন বিভাগ, মহিলা আইডি বিভাগ ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি কী বলছে তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই। তারা রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্রের যেখানে রয়েছে সেই জায়গা দেখুক। বাংলা সুরক্ষিত রয়েছে। ডেঙ্গি শিলিগুড়ি বা রাজ্যে কোথাও মহামারির আকার নেয়নি।’’ তিনি জানান, জুন মাসে থেকে শিলিগুড়ির পরিস্থিতি দেখছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীও পুরো বিষয়টি দেখছেন। গত দু দিনে হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা একটু কমেছে। তবে জ্বর নিয়ে যে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন তা আস্থারই সূচক।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি কি নিয়ন্ত্রণে? মন্ত্রীর জবাব, ‘‘সেটা স্বাস্থ্য দফতর বলবে। তবে মশা যাতে না জন্মায়, জল যাতে কোথাও না জমে থাকে তা দেখতে হবে। ওই কাজে পুরসভাই মুখ্য ভূমিকা নেবে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-ও দেখছে। রাজ্যের পুর দফতর টাকা বরাদ্দ করেছে।’’
জ্বর নিয়ে এ দিনও হাসপাতালে অন্তত দেড়শো রোগী ভর্তি হয়েছেন। মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন ১৪২ জন। বুধবার ১৬১ জন। বহিবির্ভাগেও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় রয়েছে।