রাতে, ভোরে গোপনে হানা

গন্ডারের খড়্গ কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে কখনও গভীর রাতে, কখনও কাকভোরে জঙ্গলে আঁতিপাতি করে তল্লাশি চালাচ্ছে বাইরে থেকে আসা গোয়েন্দাদের দল। গতিবিধি ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় স্থানীয় বন দফতর এবং থানাকেও সেই খবর জানানো হয়নি বলে দাবি দলেরই সদস্যদের।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:১৬
Share:

গরুমারায় উদ্ধার হওয়া খড়্গহীন গন্ডারের দেহ। নিজস্ব চিত্র

তখন সন্ধে সাতটা। যদিও, জঙ্গলে গভীর রাতের অন্ধকার নেমেছে। কনকনে শীতের রাতে জোনাকিরও দেখা নেই। বনকর্মীরা দেখেন কয়েকটি টর্চের আলো এগিয়ে আসছে জলঢাকা নদীর দিকে।

Advertisement

নদীর এ পাড়ে গরুমারা জঙ্গলের কোর এলাকা। কিছুদিন আগে সেখানেই মিলেছিল খড়গ কেটে নেওয়া একটি গন্ডারের দেহ। টর্চের আলো দেখে ঘাবড়ে যান বনবনবস্তির বাসিন্দারা। চোরাশিকারীর দল নাকি! তবে আলো জ্বালিয়ে কাজ করা চোরাশিকারীদের অভ্যেসে নেই। পরে তাঁরা বুঝলেন টর্চের আলো গোয়েন্দা দলের। গন্ডারের খড়্গ কেটে নিয়ে যাওয়ার পরে কখনও গভীর রাতে, কখনও কাকভোরে জঙ্গলে আঁতিপাতি করে তল্লাশি চালাচ্ছে বাইরে থেকে আসা গোয়েন্দাদের দল। গতিবিধি ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় স্থানীয় বন দফতর এবং থানাকেও সেই খবর জানানো হয়নি বলে দাবি দলেরই সদস্যদের।

বুধবার সন্ধেয় জঙ্গলের অন্ধকারে যে দলটি তল্লাশি চালিয়েছে তাঁদের কয়েকজন বৃহস্পতিবার ভোরে ছিলেন হুডখোলা সাফারির জিপে। মূর্তি নদীর পাশ দিয়ে নাগরাকাটা যাওয়ার রাস্তা দিয়ে ফিরে, সেই জিপ ঢুকে গেল নদীর পাশের একটি রিসর্টে। আট থেকে দশ জনের একটি দল, ভাগ করে কখনও লাটাগুড়ির কখনও মূর্তির রিসর্টে থেকেছে। এখনও পর্যন্ত লাটাগুড়ি এবং মূর্তির ১২টি রিসর্ট বদলে থেকেছেন গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। কেন প্রতিদিন রিসর্ট বদলানো? তাঁদের একজনের কথায়, “ওই যে কথায় আছে, যেখিনে দেখিবে ছাই...”

Advertisement

গত ডিসেম্বরে গন্ডার খুনের পরে তদন্তে অন্তত তিনটি সংস্থা মাঠে নেমেছে বলে খবর। বন দফতর এবং পুলিশ ছাড়াও রাজ্য পুলিশের আরও একটি সংস্থা গরুমারায় এসে তদন্ত চালাচ্ছে। তবে গন্ডারটিকে কী ভাবে মারা হল তা এখনও জানাতে পারেনি বন দফতর। বনমন্ত্রী বিনয় বর্মণের কথায়, “ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। প্রাথমিক ভাবে বিষক্রিয়া মনে হচ্ছে। রাতে-ভোরে জঙ্গলে তল্লাশি চলছে।“

একটি তদন্তকারী সংস্থার প্রশ্ন, কোনও কিছু আড়াল করতে মৃত্যুর কারণ চেপে রাখা হয়নি তো? প্রাথমিক ভাবে দফতরের ওপরমহল থেকে জানানো হয়েছিল, বিষমাখানো ডার্ট (তির) ছুড়ে গন্ডারটিকে খুন করা হয়। তারপরে কুড়ুল দিয়ে খড়্গ কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু বিষ প্রয়োগের পরপরই বিশালবপু গন্ডার মরে যায় না বলে বিশেষজ্ঞরা জানালেন। তাতে সময় লাগবে। পাঁচ ঘণ্টাও লাগতে পারে। অথবা গোটা দিন। সেই পুরো সময় ধরে তবে গন্ডারটিকে নজরদারি রাখতে হবে। গত ২৫ ডিসেম্বর গরুমারা জঙ্গলের কোর এলাকায় গন্ডারের দেহ মিলেছিল। তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোর এলাকায় চোরাশিকারীরা থাকলেও বনকর্মীরা কেন কিছুই টের পেলেন না? নাকি জঙ্গলে চোরাশিকারীদের প্রভাব অনেকটাই বেশি?

এমন সব প্রশ্নই উঠেছে তল্লাশিতে। যে রাস্তা দিয়ে গন্ডারের খড়্গ ভূটানে চলে গিয়েছে বলে অনুমান, সে রাস্তা চন্দনকাঠ পাচারেরও করিডর। এই করিডর ধরেই চোরাশিকারীদের নাগাল পাওয়াও সম্ভব বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন