Nabanna

থমকে যাচ্ছে উন্নয়ন, রিপোর্ট নবান্নে

লোকসভা ভোটের পর থেকে জলপাইগুড়ি জুড়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে একশো দিনের কাজেও।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কোথাও সংঘর্ষ চলছে, কোথাও কাজে বাধা আসছে। লোকসভা ভোটের পর থেকে জলপাইগুড়ি জুড়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে একশো দিনের কাজেও। রাজ্যের গড় কাজের দিন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা।

Advertisement

রাজ্যে গড়ে ৪৪ দিন কাজ হয়েছে, সেখানে জলপাইগুড়িতে কাজ হয়েছে ৩৮ দিন। কেন একশো দিনের কাজে জেলা পিছিয়ে তার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে নবান্নে। প্রশাসনের তরফে সেই রিপোর্টে লোকসভা ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক অশান্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার সপক্ষে প্রমাণও দিয়েছে প্রশাসন। জেলার মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে অশান্ত এলাকা ময়নাগুড়ি ব্লক। ময়নাগুড়িতে একশো দিনের কাজ হয়েছে মাত্র ২৮ দিন। প্রশাসনের দাবি, নিত্যদিন গোলমালের জেরে কাজই করানো যাচ্ছে না। জলপাইগুড়ি সদরের কিছু এলাকাতেও গোলমাল চলছে। সদরে কাজ হয়েছে গড়ে ৩৮ দিন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে একশো দিনের কাজে জেলায় প্রায় ১১ হাজার প্রকল্পে কাজ পুরো হয়েছে। আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাস খানেক বাকি। অথচ বাকি পড়ে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার প্রকল্প। অর্থাৎ বহু প্রকল্প এখনও থমকে রয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “অশান্তি, গোলমালের কারণে কিছু ব্লকে কাজ কম হয়েছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলব না, বছরের শেষে পরিসংখ্যানের ছবিতে নিশ্চয় উন্নতি ঘটবে। ”

Advertisement

অন্য উদাহরণও রয়েছে। জেলার একটি ব্লক রাজ্যের গড়ের থেকে কাজের দিনে এগিয়ে। সেই ব্লক হল মেটেলি। মেটেলিতে ৪৯ দিন কাজ হয়েছে। এই ব্লকে রাজনৈতিক গোলমাল তেমন নেই বলেই দাবি। প্রশাসন সূত্রের খবর, গোলমাল যেটুকু রয়েছে তা তৃণমূলের নেতাদের মধ্যেই। কাজেই সেখানে কোনও কাজে বাধা এলে তৃণমূলের ‘উপর মহলে’ জানালে ফল মিলছে। বাকি গোলমালের সিংহভাগই তৃণমূল এবং বিজেপির অন্দরে।

সপ্তাহখানেক আগে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বালাপাড়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ ছিল, ইচ্ছে করে তৃণমূলের সমর্থকদের শুধু কাজ দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে মণ্ডলঘাট, কাদোবাড়ি এলাকাতেও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। দোমহনী, বাহাদুরে বিজেপির কর্মীদের বাধায় অন্তত ১৫টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি বলে দাবি। বিজেপি নেতারা তা মেনেও নিচ্ছেন।

বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “তৃণমূলের মিছিলে গেলে এখন হাতে টাকা না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজের মজুরি ইচ্ছে মতো কর্মী-সমর্থকদের বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাগজে কলমে ভুয়ো কাজ দেখাচ্ছে। আমরা এই চুরি ধরে ফেলেছি। প্রতিবাদ করছি। কোনও ভুয়ো কাজ করতে দেব না।”

তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি ইচ্ছে করেই কাজে বাধা দিচ্ছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীর কথায়, “বিজেপি কী ভাবে উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ হল একশো দিনের প্রকল্প। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের গরিব মানুষদের এই প্রকল্পে টাকা কমিয়ে দিচ্ছে এবং জেলার বিজেপি কর্মীরা গ্রামে-গঞ্জে গরিব মানুষদের কাজ করতে দিচ্ছে না।”

জেলার বহু পরিবার সারা বছরে সাকুল্যে ১০ দিন কাজ পেয়েছে, এমন অনেকে রয়েছেন যাঁরা এখনও কাজই পাননি। এই প্রকল্পে অনুমোদন রয়েছে অথচ কাজ হচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা না মিটলে এই পরিস্থিতি কাটবে না, মত প্রশাসনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন