সব বিষয়েই সমস্যা ‘ডিজিটাল’ গ্রামে

খগেন মার্ডি যখন বলছিলেন ততক্ষণে পাশে জড়ো হয়েছেন আরও কয়েকজন। ভোটের কথা বলতেই প্রত্যেকের গলাতেই ক্ষোভের সুর।

Advertisement

নীতেশ বর্মণ

নকশালবাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাগানে পাতা তুলতে ব্যস্ত ছিলেন এক দল মহিলা শ্রমিক। সেখানেই কাজ করছিলেন চা শ্রমিক খগেন মার্ডি। কী সমস্যা রয়েছে এলাকায়? প্রশ্নটা করতেই মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালেন। বললেন, ‘‘কোনটার কথা জানাব। সবেতেই সমস্যা। রাস্তা নেই, পানীয় জল নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, মাঝে মাঝে বাগানের কাজও মেলে না। শিলিগুড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এশিয়ান হাইওয়ে ২ রাস্তার পাশে মঙ্গলসিংজোতে রয়েছে হাতিঘিসা পঞ্চায়েত অফিস। সেখান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মেরিভিউ চা বাগানের ঘটনা এটি।

Advertisement

খগেন মার্ডি যখন বলছিলেন ততক্ষণে পাশে জড়ো হয়েছেন আরও কয়েকজন। ভোটের কথা বলতেই প্রত্যেকের গলাতেই ক্ষোভের সুর। তাঁরা জানান, প্রতি ভোটের আগে এলাকায় অনেকে প্রচারে আসেন। বাগান এলাকায় সমস্যার কথা তুলে ধরেন। গ্রাম দত্তক, ডিজিটাল গ্রামের মত নানা আশ্বাস দিলেও ভোট মিটে গেলে তাঁদের আর দেখা মেলে না বলে অভিযোগ করলেন ওই শ্রমিকরা।

লোকসভা ভোট ঘোষণার কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এই হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতকে ডিজিটাল ঘোষণা করেন এই এলাকার বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। পঞ্চায়েত অফিসের একশো মিটারের মধ্যে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাছাড়াও সমস্ত গ্রামে ৬ মাস বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এবং তারপরে মাসে ১০ টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে স্থানীয়রা জানান। বেকার যুবদের বিনামূল্যে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বিনামূল্যে নেট চললেও অফিস থেকে বের হলেই পরিষেবা মিলছে না বলে তাদের দাবি।

Advertisement

কেন এই পরিস্থিতি? বাসিন্দাদের দাবি, সাংসদকে গ্রাম দত্তকের ব্যাপারে জানালে তিনি রাজ্য এবং প্রশাসনের অসহযোগিতার কথা বলতেন। এলাকার সিপিএমের প্রধান জৈষ্ঠ্যমোহন রায় বলেন, ‘‘সাংসদ এলাকার পানীয় জল, রাস্তাঘাট সহ বেকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। মডেল ভিলেজ, দত্তক গ্রাম, ডিজিটাল ভিলেজ অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলে না। পাঁচ বছরে মাত্র তিনবার এসেছেন। ফোনেও পাইনি।’’

হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতে বেশরিভাগ মানুষ চা বাগানের পাতা তোলার কাজের সঙ্গে যুক্ত। এলাকায় রয়েছে পাঁচটি বড় চা বাগান। বেশিরভাগ বাগান এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। নেই পাকা রাস্তা। বাসিন্দাদের দাবি, সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাগান বন্ধ হয়ে গেলেই পেটে টান পরে।

অটল এলাকার বাসিন্দা বাপন লোহারের অভিযোগ দত্তক নেওয়ার কোনও কিছুই তিনি করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটাল গ্রাম ভাল বিষয়, কিন্তু তার আগে তো রুজি রোজগার প্রয়োজন। পেটে খিদে নিয়ে ঘরে বসে ইন্টারনেট চালালে খিদে মরবে না।’’ লোহাসিংজোত এলাকার বাসিন্দা ভূপেন ওরাওঁ বলেন, ‘‘চা বাগানের মানুষের কথা কেউ ভাবে না। নামেই ডিজিটাল বাস্তবটা অন্যরকম।’’

বাসিন্দের ক্ষোভের কথা জানেন স্থানীয় বিজেপি নেতা জগদীশ লোহারও। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা তো গ্রামটা বদলাতে চেয়েছিলাম। কাজের শুরু করার চেষ্টা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার রাজনীতি করে করতে দেয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন