ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার পরে সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। তাতে কমেছে চোরাচালানও। কিন্তু কড়াকড়ি আবার কমে গেলে, চোরাচালানও ফের বাড়বে বলে আশঙ্কা সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দা ও প্রশাসনের। কিন্তু কোচবিহারের দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, তুফানগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় ঢাকার ঘটনার আগে দেদার পাচার চলছিল।
ওই এলাকার গ্রামবাসীদের বক্তব্য, দিনের বেলাতে দেখা যায় কখনও হাঁটাপথে সীমান্তের রাস্তায় সারি সারি গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কখনও ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ট্রাকে গরুর পাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সীমান্তের দিকে। রাত হলেই সীমান্তের খোলা পথ ধরে দলে দলে গরু ঢুকে যায় বাংলাদেশে। অভিযোগ, সঙ্গে চলে বেআইনি ভাবে মানুষ পারাপারও। কখনও কেউ ধরা পড়ে বিএসএফের হাতে। অনেকে ধরা পড়ে না।
বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “নজরদারি সব সময় রাখা হয়। এ জন্য মাঝে মধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়।” পুলিশের পক্ষ থেকেও সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি রাখা হচ্ছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার বলেন, “সীমান্তে বিএসএফের নজরদারি রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যাতে কোনও রকম আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা না হয়, তা পুলিশ দেখছে।”
ভারতীয় সীমান্ত নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে নজরদারি কড়া করার দাবি জানানো হয়েছে। তাঁদের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় জানান, আজ সোমবার কোচবিহারের জেলাশাসক সহ বিএসএফের আধিকারিকদের কাছে তাঁরা লিখিত ভাবে সীমান্তে কড়া নজরদারির দাবি করবেন। তিনি বলেন, “চোরাকারবারীদের নিয়ে সীমান্তের সাধারণ মানুষরা নানা সময় অভিযোগ তোলেন। গরু পাচারের জন্য তো বহু এলাকায় কৃষি জমি ক্ষতির মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া ওই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরাও এপাশে ঢুকে পড়তে পারে। এ জন্য শুধু একটি ঘটনা এখন ঘটেছে বলে নয়, সব সময় সীমান্তে কড়াকড়ি রাখা প্রয়োজন।”
নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত দাবি করেন, সীমান্ত চুক্তি কার্যকরী হওয়ায় এখন উন্মুক্ত এলাকায় কাঁটাতার দেওয়ার কাজ শুরু করতে হবে। কাঁটাতারহীন এলাকাগুলিতে চোরাকারবারীরা বেশি সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া মেখলিগঞ্জের দহগ্রাম-আঙ্গারপোতাকে ব্যবহার করেও গরু পাচার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। রাতে তিনবিঘা করিডর দিয়ে মাঝে মধ্যেই গাড়িতে করে গরু চাপিয়ে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীপ্তিমানবাবু বলেন, “ওই সুযোগে খুব সহজেই জঙ্গি ঢুকে পড়তে পারে রাজ্যে। তাই শুধু নজরদাড়ি বাড়ানো নয়, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সচেতন করতে হবে।”
বিএসএফ সূত্রের খবর, শুধু দিনহাটার গীতালদহ সীমান্ত দিয়ে চোরা কারবারের সময় ২০০টির উপরে গরু আটক করেছে বিএসএফ। ওই এলাকার একটি বড় অংশ নদী পথ। যেখানে কাঁটাতার নেই। ওই পথে গরু জলে নামিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া দিনহাটারই নয়ারহাট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এ পারে আসার অভিযোগে বছর খানেক আগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ভারতীয় ভোটারকার্ড উদ্ধার করে ওই পুলিশ।