ঐতিহ্য মেনেই নররক্তে পুজো

বংশানুক্রমিক ভাবে মেনে আসা দায়িত্ব পালনে মুখিয়ে আছেন তিনি। চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা পুতুল তাঁর ওই রক্তে ভিজিয়েই প্রতীকি বলি দেওয়া  হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৪৬
Share:

শিবেন রায়। নিজস্ব চিত্র

রাজ আমলের ঐতিহ্যবাহী বড়দেবী পুজোয় আঙুল চিরে রক্ত দেবেন শিবেন রায়। প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন বড়দেবী পুজোর অন্যতম উপকরণ নররক্ত। তাই অষ্টমীর রাতে ‘গুপ্তপুজোয়’ পুরোহিত ও রাজ পরিবারের প্রতিনিধির সামনে কনে আঙুল চিরে রক্ত দেন শিবেনবাবু। প্রায় তিন দশক ধরে এটাই তাঁর অষ্টমী পুজোর রুটিন।

Advertisement

বংশানুক্রমিক ভাবে মেনে আসা দায়িত্ব পালনে মুখিয়ে আছেন তিনি। চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা পুতুল তাঁর ওই রক্তে ভিজিয়েই প্রতীকি বলি দেওয়া হবে। জনশ্রুতি রয়েছে, বড়দেবীর পুজোয় একসময় নরবলির রেওয়াজ ছিল। গবেষকদের একাংশ অবশ্য বলেন, এ নিয়ে প্রকৃত তথ্য নেই। তবে অনেকের অনুমান নরবলি বন্ধের পরেই ওই প্রতীকি বলি হচ্ছে।

কোচবিহারের কালজানি গ্রামে শিবেনবাবুর বাড়ি। বাণেশ্বরে দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ডের আওতাধীন একটি মন্দিরে ‘দেউরি’র কাজ করেন। ফি বছর অষ্টমীর দিন উপোস থেকে রাতে রক্ত দিতে শহরের দেবীবাড়ি মন্দিরে ছুটে আসেন। যতদিন শরীর দেবে ততদিন পূর্বসূরীদের ন্যস্ত কর্তব্য পালন করতে চান। রাজাদের আমলের প্রাচীন পুজোর ঐতিহ্য বজায় থাক, সেটাও মনেপ্রাণে চান পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই প্রৌঢ়।

Advertisement

শিবেনবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজেও প্রায় তিন দশক ওই দায়িত্ব পালন করছি। বংশ পরম্পরাতেই বড়দেবীর পুজোয় ওই রক্ত দিচ্ছি। পুজোর ঐতিহ্য ভবিষ্যতেও জারি থাকুক সেটাও চাই। নইলে যদি পাছে মা কূপিত হন।’’ তাই এ নিয়ে চিন্তাও আছে তাঁর। শিবেনবাবু বলেন, আমি বিয়ে করিনি। সন্তানের প্রশ্নও নেই। ভাই, ভাইয়ের ছেলেরা কি করবে জানি না। কোচবিহার রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সি অমিয় দেববক্সি অবশ্য বলেন, ‘‘বড়দেবী বড়ই জাগ্রত। সমস্যা হলে তিনিই সমাধানের পথ দেখাবেন।’’

পুজোর আয়োজক কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, কথিত আছে, মহারাজা নরনারায়ণের স্বপ্নে দেখা দেবীরূপ প্রতিমায় উঠে এসেছে। বড়দেবীর মূর্তি প্রচলিত দুর্গার থেকে খানিকটা ভিন্ন। দেবী রক্তবর্ণা। বাহন বাঘ ও সিংহ। দেবীর দু’দিকে থাকে জয়া ও বিজয়া। পুজোয় মোষ থেকে পাঁঠা, হাঁস নানা বলির রেওয়াজও রয়েছে। পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী পুজো হয়। দেবোত্তরের সভাপতি কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, ‘‘রাজ আমলের প্রথা মেনে ওই পুজো হয়।’’

দেবোত্তরের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রায় তিরিশ বছর ধরেই শিবেনবাবুকে রক্ত দিতে দেখছি। এত কিছুর মধ্যে শিবেনবাবুর একটা শুধু আক্ষেপ, মন্দিরে ‘দেউড়ি’ হিসেবে তাঁর বেতনটা কম। সেটা যদি আরও একটু বাড়ত তাহলে ভাল হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন