আনন্দ: সাংসদ মৌসম নূরের দুই সন্তান।—নিজস্ব চিত্র
কখনও হাল্কা বৃষ্টি। কখনও গুমোট গরম। এই আবহাওয়া নিয়েই ইদ কাটাল মালদহ ও দুই দিনাজপুর। আর তার মধ্যেই আনন্দ, উৎসব নমাজ পড়া, খাওয়াদাওয়ায় মাতল মানুষ।
ইসলামপুরে যেমন। সকাল সকাল শেষ হয়েছে ইদের নামাজ। আবহওয়াও বেশ মনোরম। রোদের তেজ নেই। তাই ইদের এই দিনটি নষ্ট করতে চান ন অনেকেই। বেলা বাড়তেই ইসলামপুরের শহরে ভিড়। কেউ ঢুকছেন সিনেমা হলে। কেউ আবার হাজির ইসলামপুরের পার্কে। সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম পুলিশ।
ইসলামপুরের একটি মাত্র সিনেমা হলে এ দিন ‘রেস-৩’ সিনেমা চলছে। আগুরসিয়ার বাসিন্দা মহম্মদ জিসানের কথায়, ‘‘বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছি, জমিয়ে সিনেমা দেখব।’’ চোপড়ার যুবক আকবর হকের কথায়, ‘‘কোথায় ঘুরব? ঘোরার তো জায়গা নেই ইসলামপুরে। তাই ভাবলাম অগত্যা সিনেমা।’’
এই ভাবে দীর্ঘ হয়েছে হলের সামনে লাইন। সিঙ্গল স্ক্রিনে সিনেমা দেখার রেওয়াজ কমছে শহরগুলোয়। কিন্তু এ দিনের ভিড় নিঃসন্দেহে খুশি করে দিয়েছে হল মালিকদের।
অন্য সব জায়গায় যে আবহাওয়ার এমন আনুকূল্য পেয়েছেন মানুষ, তা নয়। তার মধ্যেই ইদের নমাজ পড়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ।
এ দিন সকালে রায়গঞ্জের উকিলপাড়া এলাকার ইদগাহ ময়দানে নমাজ পড়েন শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কয়েকশো বাসিন্দা। ইদগাহে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম, রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ও রায়গঞ্জ পুরসভার তৃণমূলের চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাস। ইদ উপলক্ষ এ দিন রাতে রায়গঞ্জের কুমারডাঙি এলাকায় কাওয়ালির অনুষ্ঠান আয়োজন করেন ওই এলাকার সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের একাংশ। রায়গঞ্জেও এ দিন সমস্ত সিনেমা হলে প্রতিটি শোতেই দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ে। ইটাহারের ইদগাহে গিয়ে সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানান স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্য। কালিয়াগঞ্জ ও হেমতাবাদের বিভিন্ন ইদগাহতেও নামাজ পড়ার জন্য ভিড় উপচে পড়ে।
শনিবার সকাল নটায় মালদহের সুজাপুর নয়মৌজা ইদগাহ মাঠে প্রায় এক লক্ষ মানুষ নমাজপাঠে অংশ নেন। ভিড় মাঠ ছাপিয়ে চলে আসে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে। ফলে এ দিন সকাল নটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা জাতীয় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর জেরে সুজাপুরের দুপাশে জাতীয় সড়কে যানজটও হয়।
দৌলতপুর থেকে বোল্লা, সমজিয়া থেকে সৈয়দপুর— দক্ষিণ দিনাজপুরের সর্বত্র ইদ উৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয়। সকাল থেকে বালুরঘাট শহর, হিলি সীমান্তের ধলপাড়া, পাঞ্জুল, তপনের হরসুরা, দ্বীপখন্ডা, কুশমন্ডির আমিনপুর, গঙ্গারামপুরের বাসুরিয়া, শুকদেবপুর, হরিরামপুরের বাগিচাপুর, গোকর্ণ, কুমারগঞ্জের মোহনা, জাকিরপুর এলাকার মতো বহু জায়গায় নমাজ পাঠের অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে।
বালুরঘাটের বোল্লা এলাকায় আয়োজিত বড় অনুষ্ঠান ও মেলায় অন্য সমম্প্রদায়ের মানুষও সামিল হন। নমাজ শেষে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় ও মিস্টিমুখ করেন। ইদ উপলক্ষে জেলার বেশ কিছু এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।