প়ড়ে রয়েছে হাতির দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফের গর্ভবতী একটি স্ত্রী হাতির মৃত্যু হল ডুয়ার্সের বানারহাটের কালাপানি খাসবস্তিতে। ধান খেত বাঁচাতে জমির কয়েক মিটার দূরে বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয় বলে বন দফতরের অভিযোগ। মঙ্গলবার গভীর রাতে রেতি জঙ্গল থেকে দল বেঁধে খাসবস্তিতে চলে আসে হাতির দল। ওই দলের একটি হাতিই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় বলে বনকর্মিরা জানান। বুধবার সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বানারহাট, বিন্নাগুড়ি ও দলগাঁও রেঞ্জের বনকর্মিরা। ছুটে আসে কালাপানির ১৭ ব্যাটালিয়নের এসএসবির আউটপোস্টের জওয়ানরা।
ডুয়ার্সের বানারহাটের রেতি ও কালাপানি নদী ঘেরা রেতি ও কালাপানি জঙ্গল থেকে মাঝে মধ্যেই বস্তিতে হাতির দল চলে আসে বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। হাতির দল বস্তিতে ঢুকে পড়লে সবাই মিলে মশাল জ্বালিয়ে হইচই করে হাতি তাড়ানোর কাজে নেমে পড়েন। তাতেও হাতির দলের কোনও হোলদোল দেখা যায় না। হাতে কোনও অস্ত্র না থাকায় রাতের অন্ধকারে দূর থেকেই হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন বাসিন্দরা। এলাকার একটি বিট অফিস থাকলেও প্রয়োজনের সময় বনকর্মিদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। মাঝে মাঝে হাতির দল চলে আসে কালাপানির এসএসবি-র ১৭ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত আউট পোস্টেও। ওই আউট পোস্টের জওয়ান এসআই ভূপেন্দ্রনাথ বলেন, “বুনো হাতির দল মাঝে মধ্যে আমাদের আউটপোস্টেও চলে আসে। মঙ্গলবার রাতেও ২০-২৫টি হাতি চলে এসেছিল। জওয়ানরা তাড়িয়ে দেওয়ার পর সম্ভবত বস্তিতে চলে আসে। সকালে হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসি। ঘটনাস্থলে এসে দেখলাম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটি মরে পড়ে আছে।”
এলাকার বাসিন্দা ভুজবাহাদুর ভুজেল বলেন, “প্রতিনিয়ত হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমাদের বাঁচতে হচ্ছে। রেতি ও কালাপানি জঙ্গল থেকে মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পর হাতি ঢুকে জমির ফসল খেয়ে নিচ্ছে। ভাঙছে বাড়ি ঘরও। হাতির হানায় ফসলের ক্ষতি বা বাড়িঘর ভাঙায় নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। সেজন্য অবৈধ জেনেও কেউ কেউ জমির ফসল বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বিদ্যুতের তার দিয়ে ঘিরে রাখে। তবে বিদ্যুতের তার দিয়ে জমি ঘিরে রাখা অন্যায়।”
যে জমির মধ্যে হাতির দেহ পড়েছিল, সেই জমির মালিকের খোঁজ চলছে জানান বনকর্মিরা। বনদফতরের বানারহাটের রেঞ্জার দয়াল সরকার বলেন, “দল বেঁধেই মঙ্গলবার রাতে হাতি ঢুকেছিল এই বস্তিতে। বস্তির রাস্তার পাশে ফাঁকা জমিতে দেহটি পাওয়া যায়। তার কিছুটা দূরে জমিতে ধান আছে। জমির মালিকের খোঁজ করে তাঁর নামে থানায় অভিযোগ করা হবে। আশপাশের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত জমির ফসল বাঁচানোর জন্য অবৈধভাবে হুকিং করে ঘিরে রাখা বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়েই পুর্ণবয়স্ক স্ত্রী হাতিটি মারা গিয়েছে। হাতিটির শরীরের এক জায়গায় কিছুটা পুড়ে যাওয়ার দাগ দেখা গিয়েছে। দেহ ময়নাতদন্ত হলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।”