খুশির মেজাজ জহরমল জালান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। — নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় বড়সড় সম্প্রসারণের ফলে রাজ্য তো বটেই আসানসোল শিল্পাঞ্চলও পেল এক জন নতুন মন্ত্রী। রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়েছে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার। মঙ্গলবার এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মন্ত্রীর স্কুল, পুরনো এলাকা— সর্বত্রই দেখা গেল উৎসবের মেজাজ।
সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন আসানসোলের জহরমল জালান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। মঙ্গলবার স্কুলের প্রার্থনাসভা শেষ হওয়ার পরেই প্রধান শিক্ষক উদাস চক্রবর্তী ছাত্র-শিক্ষকদের সামনে স্কুলের প্রাক্তনীর মন্ত্রী হওয়ার খবরটা জানিয়ে দেন। খবর চাউর হতেই স্কুল চত্বরে কার্যত উৎসবের চেহারা নেয়। ছাত্ররা জানায়, এখন উৎসবের মরসুম চলছে। ইদ আর রথযাত্রার মাঝেই এমন খবর তাই বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে। উৎসবের পাশাপাশি স্কুলের উন্নয়নের জন্য তদ্বির করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উদাসবাবু বলেই দেন, ‘‘উনি আমাদের গর্ব। ওঁকে স্কুলে আমন্ত্রণ জানানো হবে। স্কুলের উন্নয়নের জন্য আমরা আবেদন জানাব।’’ মন্ত্রী এই স্কুল থেকে পাশ করার সময়ে শিক্ষকতা করতে আসেন প্রভাসচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ছাত্রের এই সাফল্যে তিনি রীতিমতো খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘খবরটা পেয়ে খুব ভাল লাগছে। এর আগেও উনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই সময়ে স্কুলের উন্নয়নে সাহায্য করেছিলেন। আশা করি এ বারেও তেমনটা হবে।’’
ছেলেবেলা থেকে মন্ত্রীর জীবনের একটি বড় সময় কেটেছে জেকে নগরে। সেখানের অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় তাঁর বাবা চাকরি করতেন। সেই সূত্রে ওই এলাকায় মন্ত্রীর পৈত্রিক বাড়িও রয়েছে। ওই বাড়িতেই জন্ম হয় সুরেন্দ্রবাবুর। মঙ্গলবার জেকে নগরে গিয়ে দেখা গেল মন্ত্রীর ছেলেবেলার বন্ধুরা খুশিতে ডগমগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, এই এলাকা থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় অহলুওয়ালিয়ার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বড় হওয়ার সময়ে অ্যালুমিনিয়াম কারখানার রমরমা ছিল নজরকাড়া। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। কারখানাও গিয়েছে বন্ধ হয়ে। এলাকাবাসীর দাবি, মন্ত্রী হয়ে কারখানাটা খোলার ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দা রসময় পালের কথায়, ‘‘কারখানা বন্ধ। এলাকার ছেলেরা কাজ পাচ্ছে না। ওনার কাছে কারখানা খোলার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’’
কারখানা খোলার আবেদন জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দীর্ঘদিনের বন্ধুরাও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে একদা রাজনীতি করেছেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান। এখন তিনি ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যকরী সভাপতি। রাজেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে আমরা তাঁর কাছে দরবার করবই।’’ তবে সেই সঙ্গে তিনি জানান, শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর।
শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলের মতে, সাম্প্রতিক কয়েকটি ভোটের ফলাফলের নিরিখে আসানসোলকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৪-র লোকসভা, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্বে নরেন্দ্র মোদীকেও আসতে দেখা গিয়েছে আসানসোলে। লোকসভাতে এই কেন্দ্র থেকেই ভোটে জিতে মন্ত্রী হন বাবুল সুপ্রিয়। শিল্পাঞ্চলের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, এ বার সুরেন্দ্রবাবুকেও মন্ত্রী করে আখেরে প্রধানমন্ত্রী আসানসোলকেই উপহার দিয়েছেন। দলের জেলা সভাপতি তাপস রায়ের দাবি, ‘‘এর ফলে আমরা সাংগঠনিক ভাবে সুবিধা পাব। কারণ তিনি এই এলাকায় দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন।’’