২৫ বছর অবৈধ গর্ভপাত করাচ্ছেন খোকন

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, খোকনের বাবাও এলাকায় হাতুড়ে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খোকনও ওষুধের দোকানের আড়ালে এইভাবে কার্যত ‘চেম্বার’ খুলে এই ব্যবসা ফেঁদেছিলেন

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:৩৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

চিকিৎসক হিসেবে কোনও ডিগ্রি নেই। তার পরেও প্রায় ২৫ বছর ধরে ওষুধের দোকানের আড়ালে গর্ভপাতের মতো অবৈধ কাজ করতেন তৃণমূল কাউন্সিলর খোকন বিশ্বাস। বংশীহারি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই ব্যবসা কীভাবে চালাতেন খোকন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, খোকনের বাবাও এলাকায় হাতুড়ে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। খোকনও ওষুধের দোকানের আড়ালে এইভাবে কার্যত ‘চেম্বার’ খুলে এই ব্যবসা ফেঁদেছিলেন। অভিযোগ, বুনিয়াদপুরের শিবপুর মোড়ে নিজের বাড়ির মধ্যেই রীতিমত একটি ‘নার্সিংহোম’ তৈরি করে ফেলেছিলেন অভিযুক্ত খোকন। বাইরে থেকে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। বাড়ির সামনে সাদামাঠা ওষুধের দোকান। ভেতরে একটি ঘরে পাঁচটি বেড পাতা। রয়েছে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। সেখানেই চলত অবৈধ গর্ভপাতের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খোকন তৃণমূলের কাউন্সিলর বলেই এটা নিয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আমরা জানতামই না, খোকনের ঘরের ভেতরে নার্সিংহোমের মতো এত এলাহি ব্যবস্থা রয়েছে!’’

এখানেই গর্ভপাত করাতে এসে গত শুক্রবার এক নাবালিকার মৃত্যুর জেরে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার পরই তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে রাতের দিকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান অভিযুক্ত কাউন্সিলর। এর পরেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পড়ে। বিজেপির বুনিয়াদপুর টাউন সভাপতি সঞ্জীব দাস বলেন, ‘‘শাসক দলের নেতা বলেই পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উনি শুধু অবৈধ গর্ভপাত করাতেন না, অন্তঃসত্ত্বাদের উপর অত্যাচার করতেন বলেও আমাদের কাছে খবর আছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘এই ভাবে দিনের পর দিন থানার সামনে এই কাজ চলছে। অথচ পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’

Advertisement

তবে, খোকনের বিরুদ্ধে গর্ভপাতের মতো অবৈধ কাজ করার অভিযোগ এই প্রথম নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, তিন বছর আগে এখানে গর্ভপাত করাতে এসে এক মহিলার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার চার্জশিটও গঠন করা হয়েছিল। তারপর থেকে জামিনে মুক্ত ছিলেন এই নেতা। এর পরেও খোকনের ওষুধের দোকানের আড়ালে গর্ভপাত করানোর কাজ চলেছে। এদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বে বক্তব্য, দলীয় কাউন্সিলর এমন অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তা দল জানত না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কাউন্সিলর জড়িত সেটা আমাদের জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’

এদিকে, এখনও পলাতক অভিযুক্ত কাউন্সিলর খোকন। শনিবার রাতেই মৃত নাবালিকার পরিবার তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছে। জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। পুরনো অভিযোগও রয়েছে। আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন