আলুতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ কোচবিহারে

আলুতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কোচবিহারের আলু চাষিরা। সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য ও বাজার থেকে আলু কেনার যে পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করেছে তাতে অসন্তুষ্ট আলুচাষিরা। এরই প্রতিবাদে আজ পথে নামেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

ক্রেতা নেই। ফালাকাটার চুয়াখোলা গ্রামে আলু পড়ে রয়েছে জমিতেই। বুধবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

আলুতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কোচবিহারের আলু চাষিরা। সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য ও বাজার থেকে আলু কেনার যে পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করেছে তাতে অসন্তুষ্ট আলুচাষিরা। এরই প্রতিবাদে আজ পথে নামেন তাঁরা।

Advertisement

বুধবার কোচবিহারের কাছারি মোড়ে পাকা সড়কের উপরে কয়েক কেজি আলু ফেলে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ধান-পাট-আলু চাষি সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে বিক্ষোভ চলে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই বিক্ষোভকে প্রতীকী বলে জানানো হয়েছে। সরকার আলু চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে না এলে জেলা জুড়ে আইন অমান্য করা হবে বলেও জানানো হয়। সংগঠনের সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “সরকার যে পরিমাণ আলু কিনবে বলে জানিয়েছে, তাতে কিছুই হবে না। এমন হলে চাষির আত্মহত্যা বাড়তে থাকবে।”

তাঁর আরও অভিযোগ, হিমঘরগুলি থেকে চাষিদের কোনও বন্ড দেওয়া হচ্ছে না। একশ্রেণির ব্যবসায়ী ওই বন্ড কিনে রেখে দিয়েছে। তাঁরা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। জেলাশাসক পি ঊল্গানাথন জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশিকা মেনে ইতিমধ্যেই জেলায় আলু কেনার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। মেখলিগঞ্জ মহকুমায় আলু কেনা শুরু হয়েছে। অন্য মহকুমাগুলিতেও আলু কেনা শুরু হবে। তিনি বলেন, “হিমঘরে চাষিদের বন্ড না পাওয়ার অভিযোগ আমি পেয়েছি। তা নিয়ে কৃষি বিপণন দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা হবে।”

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহারে এবারে প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ মেট্রিক টন আলু উত্‌পাদন হয়েছে। কোচবিহারে হিমঘরের সংখ্যা ১২ টি। যেখানে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন আলু রাখা যাবে। বাকি আলুর কি ব্যবস্থা হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সরকার বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং মিডডেমিলের জন্য আলু কেনার যে নির্দেশিকা জারি করেছে, তাতে মাত্র কয়েক হাজার মেট্রিক টন আলু বিক্রি হতে পারে। এর বাইরে যে আলু পড়ে থাকবে তার দাম না পেলে চাষিদের অবস্থা ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা ধান-পাট-আলু চাষি সংগ্রাম কমিটির। সংগঠনের পক্ষে ১৬০০ টাকা কুইন্টাল দরে সরকারকে আলু কিনতে হবে বলে দাবি তোলা হয়েছে।

এ দিনের বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন পেটলার কৃষক বয়জার রহমান। তিনি বলেন, “বাজারে সাড়ে ৩ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন চললে বিপদে পড়ে যাব। ”

বিজেপির পক্ষ থেকেও হিমঘরে কৃষকরা আলু রাখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলে এদিন অতিরিক্ত জেলাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দলের কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে নামব।”

এ দিকে রাজ্যে হিমঘরের ঘাটতি রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ও। এদিন বালুরঘাটে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে মালদহের গাজলে কৃষক বাজারের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখলেন মন্ত্রী অরূপবাবু। এখানেই তিনি বলেন, “রাজ্যে পর্যাপ্ত হিমঘর নেই। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। বিভিন্ন সমবায় সমিতিদের হিমঘর তৈরির ব্যপারে উত্‌সাহ দেওয়া হচ্ছে।”

গত বছরের ২৪ নভেম্বর গাজলে কৃষক বাজারের শিলান্যাস করা হয়। পাঁচ একর জায়গার উপরে গড়ে তোলা হচ্ছে বাজারটি। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ কোটি আট লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা। প্রায় ১৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন