ডিপিএসসি-র দফতর। — নিজস্ব চিত্র
আলোয় সাজছে শহর। উৎসবে-উচ্ছ্বাসে ভাসতে প্রস্তুতি চলছে শহর-গ্রাম সবেতেই। কারণ, ২৭ জুন, জেলা গঠনের দ্বিবর্ষ পূর্তি উৎসবে যোগ দেওয়ার কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাতে উদ্দীপনা আরও বেড়েছে। জেলা গঠনের জন্য বিস্তর সুবিধা পাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকেই।
কিন্তু, উদ্বেগ, হতাশার ছবিটাও কম নেই নানা এলাকায়। নানা সরকারি দফতরে কান পাতলে শোনা যায়, সমস্যার কথা।
যেমন, জেলা পুলিশ সুপারের অফিসেই রয়েছে কর্মীর অভাব। জয়গাঁয় এসডিপিও অফিস হলেও স্থায়ী পরিকাঠামো কবে হবে, তা এখনও পুলিশের অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপারের বসার জন্য জায়গা হয়েছে। অফিসকর্মীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হয়নি। অফিস তৈরির কাজ চলছে। সোনাপুর, হাসিমারা ও বারবিশা আলাদা থানার গঠনের কথা রয়েছে। কবে তা হবে, বোঝা যাচ্ছে না বলে একান্তে মানছেন পুলিশকর্মীদের অনেকেই। উপরন্তু, মহিলা থানার অনুমোদন মিললেও তার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। নতুন পুলিশ লাইন হয়নি। পুলিশকর্মীদের ভাল থাকার জায়গায় বড়ই অভাব।
জেলাশাসকের দফতরেও কর্মীর অভাব রয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকারি অফিসে কর্মীর অভাব পূরণ করতে নবান্নের কাছে হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু, আশ্বাস মিললেও কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি। আবার জলপাইগুড়ি জেলা সদরের কর্মীদের অনেকেই আলিপুরদুয়ারে বদলি নিতে আগ্রহী নন। জেলা প্রশাসনের এক অফিসার জানান, সব দিক মাথায় রেখেই ধীরে সুস্থে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে আদালত নিয়ে। জেলা ঘোষণার দিনই আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসকের দফতরে পুরোন ঘরটিকে জেলা আদালতের জন্য বরাদ্দ করা হয়। টাঙানো হয় জেলা আদালতের সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ড থাকলেও চালু হয়নি জেলা আদালত। বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ার বিভিন্ন ব্লকের বিচারপ্রার্থী থেকে শুরু করে আইনজীবীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। জুভেনাইল, নেশা সংক্রান্ত মামলা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত মামলা সহ বেশ কিছু মামলার জন্য প্রায়ই জলপাইগুড়ি ছুটতে হয়।
কষ্টেসৃষ্টে চলছে জেলা শিক্ষা দফতরও। একেই তো আলিপুরদুয়ার শিক্ষা জেলা হয়েছে জেলা গঠনের বেশ কয়েক মাস পরে। নিযুক্ত হয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক ও প্রাথমিক জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। জেলার শিক্ষা প্রসারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের নিজস্ব কোনও অফিস নেই। আলিপুরদুয়ার কলেজিয়েট স্কুলের কয়েকটি ক্লাস রুমে চলছে দফতর দু’টি। স্কুল পরিদর্শকের আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত অধিকাংশ কাজ এখনও জলপাইগুড়িতে গিয়ে করাতে হয়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শকের নিজস্ব অফিস নেই। একটি স্কুলে চলছে অফিস। প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকের দফতরে সহকারী স্কুল পরিদর্শক ৩ জন থাকার কথা, একজন ও নেই। করণিক মাত্র ২ জন। আরও প্রায় ৪ জন দরকার।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও পরিকাঠামো অসম্পূর্ণ। তবে জরুরি ভিত্তিতে চালু হয়েছে অনেক পরিষেবাই। জেলা হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স রে, সিটি স্ক্যান আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, সিসিইউ ডায়ালিসিস ইউনিট হয়েছে। কিন্তু, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব প্রচণ্ড। ৬৫ জন নার্সের পদ ফাকা। থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট তৈরি না হওয়ায় সমস্যা ক্রমশ জটিল হচ্ছে বলে স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেরই অভিযোগ। আউটডোরের আয়তন এতই কম যে বসা দূরের কথা, দাঁড়ানো মুশকিল। আলাদা বড় ঘরের প্রয়োজন।
জেলায় স্থায়ী তথ্য সংস্কৃতিক আধিকারিক নেই। জেলা তথ্য দফতরের জন্য ছয় জন কর্মীর অনুমোদন হলেও, তা নেই। মহকুমা তথ্য আধিকারিক ও ওই দফতরের কর্মীরা জেলা দফতরের কাজ চালাচ্ছেন। জেলা শিল্পতালুক গড়ার বিষয় বণিক মহল বার বার জানলেও শিল্প তালুক তৈরিতে এখনও কেউ উদ্যোগী হননি। অথচ নবগঠিত জেলা আলিপুরদুয়ারের শিল্প-সম্ভাবনা প্রভূত। উপরন্তু, আলিপুরদুয়ারে চা বাগানের সংখ্যা কম নেই। রয়েছে বন, জঙ্গল, পাহাড়ও। চা-পর্যটনের মেলবন্ধনে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আরও বেশি টানার চেষ্টা হতেই পারে।
(ক্রমশ)