গলিতে ঘাপটি দিয়ে শব্দাসুর

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘বোম পাওয়া যাবে?’’ পা থেকে মাথা পর্যন্ত কিছু ক্ষণ দেখলেন তিনি। এরপরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কত পিস?’’ ৫০০ পিসের কথা শুনে ইশারায় তাঁর পিছন পিছন চলার ইঙ্গিত  করে এগিয়ে গেলেন।  

Advertisement

অভিজিৎ সাহা 

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৯
Share:

দেদার বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি। ফাইল চিত্র

ইংরেজবাজার শহরের বিচিত্রা মার্কেট। রথবাড়ি ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে মাত্র দেড়শো মিটার দূরে মার্কেটে ঢোকার প্রথম গলিতে গেলেই বাজির পাইকারি বাজার। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটেয় সেখানেই একটি বাজির দোকানের সামনে আচমকা প্রশ্নটা ভেসে এল, ‘‘কী নেবেন?’’

Advertisement

পাশ ফিরে দেখি, মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি এক দৃষ্টে আমার দিকে চেয়ে রয়েছেন। টি শার্ট, লুঙ্গি। কোমরে গামছা বাঁধা।

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘বোম পাওয়া যাবে?’’ পা থেকে মাথা পর্যন্ত কিছু ক্ষণ দেখলেন তিনি। এরপরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কত পিস?’’ ৫০০ পিসের কথা শুনে ইশারায় তাঁর পিছন পিছন চলার ইঙ্গিত করে এগিয়ে গেলেন।

Advertisement

দোকানের সামনের গলিতে ২৫ মিটার গিয়ে ঢুকে গেলেন ডান দিকে। সেই গলিতে অধিকাংশ দোকানেরই ঝাঁপ বহু দিন ধরে বন্ধ। ভেঙে পড়ছে বাজারের শেড। অন্ধকার হয়ে রয়েছে পুরো চত্বর। সেই অন্ধকার পরিবেশে একটি দোকানে টিমটিম করে জ্বলছে আলো। ওই দোকানে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। দোকানে মজুত শ’য়ে শ’য়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজির প্যাকেট। এমনকি, কয়েকটি দেখতে সুতলি বোমার মতো। কিছু ক্ষণ দরদাম করার পর শব্দবাজির ছবি তুলতেই লাফিয়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন দোকান মালিক। ছবিটি মোবাইল থেকে ডিলিট করে দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হয়। দোকান মালিক বললেন, “ছবি একদম তুলবেন না।’’ এর পরেই গলা চড়িয়ে ধমক দিয়ে ওই কর্মীকে বললেন, ‘‘এমন করে কখনওই অজনা-অচেনা খদ্দেরদের দোকানে আনবি না।”

কালীপুজো আসতে বাকি আরও চার দিন। তার আগেই মালদহে বাজির পাইকারি বাজারে মজুত হতে শুরু করেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। প্রকাশ্যে নয়, আড়ালে রমরমিয়ে চলছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি। এক বাজি বিক্রেতা বললেন, “সুতলি বোমার মতো দেখতে তিন ধরনের বাজি বাজারে এবারে এসেছে। বড় দেড়শো, মাঝারি ১২০ এবং ছোট ৬০ টাকা প্রতি প্যাকেট। একটি ফাটালে বোমার মতোই শব্দ হবে। কেঁপে উঠবে পুরো এলাকা।” এ ছাড়া রকেট, চকলেট, আলু, পেঁয়াজ হরেক রকমের শব্দবাজি রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাজারে এখন থেকেই দেদার শব্দবাজি বিক্রি হতে শুরু করলেও হেলদোল নেই পুলিশ প্রশাসনের বলে অভিযোগ। পাইকারি বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, “কালীপুজোর আগের রাতে কার্যত প্রকাশ্যেই শব্দবাজি বিক্রি হবে। এই কয়েক দিনে বোঝাপড়া হয়ে যাবে। তারপরেই বিক্রি করা যাবে শব্দবাজি।” কার সঙ্গে বোঝাপড়া? মুচকি হেসে উত্তর এড়ালেন তিনি।

কিন্তু কোথা থেকে আসছে মালদহে এই নিষিদ্ধ শব্দবাজি? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহে বাজির কারখানা নেই। মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে সড়ক পথে শব্দবাজি ঢুকছে জেলায়। বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও শব্দবাজি জেলায় ঢুকছে।

যদিও শব্দবাজি রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই জেলার বাজারগুলিতে অভিযান চালানো হবে।” কারও সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া করে কেউ নিষিদ্ধ বাডি বিক্রি করতে পারবেন না বলেও পুলিশকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন