ফুটবল নেশায় বাড়ছে পর্যটন

ভরা স্টেডিয়ামে দেখা হয়ে গেল দু’দলের। অভিজিৎ দত্তরা এসেছেন বালি থেকে, অনুপ কার্জিরা দমদম থেকে। তখন ম্যাচ শুরু হতে মিনিট পঁয়তাল্লিশ বাকি। দু’দলই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। আলাপ জমে গেল।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

ভরা স্টেডিয়ামে দেখা হয়ে গেল দু’দলের। অভিজিৎ দত্তরা এসেছেন বালি থেকে, অনুপ কার্জিরা দমদম থেকে। তখন ম্যাচ শুরু হতে মিনিট পঁয়তাল্লিশ বাকি। দু’দলই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। আলাপ জমে গেল। অনুপবাবুরা জানলেন ম্যাচের পরে রবিবার এবং সোমবার দু’দিন দার্জিলিং যাচ্ছেন অভিজিৎবাবুদের ৪ জনের দল। রবিবার ছুটির দিন, সোমবার রাতে ট্রেন ধরলে মঙ্গলবার কলকাতা ফিরতে পারবেন। যেমনই ভাবনা, তেমনই সম্মতি। অভিজিৎবাবু ফোন ঘোরালেন তাঁর ট্র্যাভেল সংস্থাকে, আবদার তাঁদের দার্জিলিং ভ্রমণে অনুপবাবুদের তিন জনেরও ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং সোমবার রাতের ফেরার টিকিটও ‘ম্যানেজ’ করে দিতে হবে।

Advertisement

এমনই অজস্র আবদার সামলাতে হয়েছে শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিঙের বিভিন্ন ট্র্যাভেল সংস্থাকে। শনিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি ম্যাচে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ থেকে অজস্র সমর্থক, ফুটবলপ্রেমী এসেছিলেন। শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই শিলিগুড়ির বড়-ছোট-মাঝারি হোটেলে ‘ঠাঁই নাই’ বুলি শোনা গিয়েছে। শনিবার সন্ধের পরে তো শিলিগুড়ি লাগোয়া হোটেলের ঘর খুঁজতেও হন্যে হতে হয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খেলা দেখতে আসা অনেকেরই রবিবার-সোমবারও বুকিং ছিল। অনেকে আবার শনিবার রাতে বাড়তি দু’দিন ঘর রাখার আর্জি জানিয়েছেন। ম্যাচের পর দিন কেউ গিয়েছেন দার্জিলিং, সিকিম কেউ বা ডুয়ার্সে। যাঁরা দার্জিলিং-ডুয়ার্সে হোটেল-রিসর্টে জায়গা পাননি, তাঁরা আশপাশে ‘ডে-ভিসিট’ করেছেন। আগামী ২৩ এপ্রিল ফের শিলিগুড়িতে আই-লিগের বড় ম্যাচ রয়েছে। মোহনবাগানের সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসির ম্যাচ রয়েছে। সে ম্যাচ লিগের নির্ণায়ক হতে পারে। গত শনিবারের ম্যাচে নিরাশ মোহনবাগান সমর্থকদের আগামী ২৩-এর ম্যাচ ঘিরে নতুন উদ্যমে ঝাঁপাচ্ছেন। সে দিনও প্রচুর সমর্থক আসতে চলেছে শিলিগুড়িতে। সে দিনও শনিবার হওয়ায় পরের ছুটির দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন অনেকেই। সেই মতো প্যাকেজও তৈরি করে দিচ্ছেন ট্যুর অপারেটররা। ডার্বির দর্শকদের ম্যাচ ফুরোলে ভ্রমণের এই দিক শিলিগুড়িতে নতুন। প্রতি মরসুমে গড়পরতা কত পর্যটক আসতে পারেন তার একটি হিসেব থাকে ভ্রমণ সংস্থাগুলির। সে হিসেবে ডার্বির দশর্করা এ বার জোয়ার এনেছেন। বড় ফুটবল ম্যাচ ঘিরে এ বার নতুন পর্যটনের সম্ভাবনায় বুক বাঁধছেন ভ্রমণ ব্যবসায়ীরা। যেমন উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল রবিবার বললেন, ‘‘গতকাল ম্যাচ শেষের পরে প্রচুর ফোন পেয়েছি, কেউ ম্যাচ জেতার আনন্দ উদযাপন করতে দার্জিলিং যেতে চেয়েছেন, কেউ বা ম্যাচের ফলে নিরাশ হয়ে মন ভাল করতে ডুয়ার্সের জঙ্গলে যাবেন বলে আবদার করেছেন। শহরের হোটেলগুলিতেও ফুটবল দর্শকই ভরা। কাঞ্চনজঙ্গা স্টেডিয়ামে নিয়মিত বড় ম্যাচ হলে, শিলিগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের পর্যটনে সুদিন আসবেই।’’

ম্যাচ শেষ করেই সিকিম রওনা দিয়েছেন অর্ণব গোস্বামীরা। ট্যাঙরার বাসিন্দা অর্ণববাবু অবশ্য আগে থেকে পরিকল্পনা করেই এসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার শিলিগুড়িতে খেলা হবে শুনেই ঠিক করেছিলাম, যাব যখন তখন সিকিম-দার্জিলিংও ঘুরে নেব।’’ ট্যাংরার অর্ণববাবু, দমদমের অনুপবাবুরা ট্যুর অপারেটরদের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত পর্যটক’। দার্জিলিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর এজেন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ লামা বলেন, ‘‘এ দিন রবিবার যত জন দার্জিলিঙে এসেছেন তাদের নব্বই শতাংশ ডার্বি দর্শক। আগামী ২৩ এপ্রিলও ম্যাচ দেখে অনেকে দার্জিলিং থাকবেন, তার প্যাকেজ তৈরি করে দিতে বলছেন।’’ সেবক রোডের একটি হোটেলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা উঠেছিলেন। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের আবদার মেটাতে ইলিশ মাছের ভাজা থেকে নানা পদ জোগাতে হয়েছে হোটেল মালিকদের। রাত পর্যন্ত পার্টি চলেছে বিধান রোডের কয়েকটি হোটেলেও। তাই ঘরের মাঠে নিয়মিত আরও বেশি করে বড় ম্যাচ চাইছেন শহরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন