পরিবার: সদ্যোজাত তিন শাবকের সঙ্গে বাঘিনী ‘শীলা’। শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বলতে ক্যামেরার চোখে দেখতে পাওয়া নেওড়াভ্যালির বাঘ। আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের তিনটি বাঘ থাকার সরকারি রিপোর্ট। এর বাইরে গত তিন দশকে উত্তরের জঙ্গলে কোথাও বাঘের দেখা মেলেনি বলে বন কর্তারাই জানান। কিন্তু বেঙ্গল সাফারি পার্কের স্বাভাবিক জঙ্গলে তিনটি রয়্যাল বেঙ্গলের জন্মের পর নতুন করে আশা দেখা দিয়েছে বন দফতরের অন্দরে। স্বাভাবিক পরিবেশে বাঘের সন্তান প্রসব করিয়ে শাবকদের সুস্থ ভাবে বড় করাই এখন বন কর্তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তারপর নিরাপদ জঙ্গলে তাদের ছাড়ার ভাবনা শুরু করেছেন বন কর্তারা।
রাজ্য বন দফতরের এক কর্তা জানান, খাঁচায় রেখে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রসব করানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আজও দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, রসিকবিল বা খয়েরবাড়ি রেসকিউ সেন্টারে নতুন কোনও শাবকের জন্ম হয়নি। স্বাভাবিক জঙ্গল ছাড়া বাঘের মেলামেশা করিয়ে সন্তান হলে তাতে শারীরিক এবং জিনগত নানা সমস্যা আসার সম্ভবনা থাকে। শাবক মৃত্যুর হার বাড়ার আশঙ্কাও থাকে। কিন্তু বেঙ্গল সাফারিতে ২০ হেক্টরের বাঘের ঘেরাটোপ, অনেকটাই স্বাভাবিক জঙ্গলের মতো। পার্কের মহিলা বাঘ শীলা তাই স্বাভাবিক পরিবেশেই গর্ভবতী হয়ে পড়ে।
উত্তরবঙ্গের এক বনকর্তা বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে পার্কে আরও মহিলা বাঘ এনে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’-এর সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। তবে বাঘ সুমারিতে, জঙ্গলের স্বাভাবিক পরিবেশে বাঘ বড় না হলে তা গণনায় আসে না। কাপটিভ ব্রিডিং-এর শাবকদের সাফারির জঙ্গলে ছেড়ে বড় করে, কেন্দ্রীয় অনুমতিতে পরবর্তীতে নিরাপদ জঙ্গলে ছাড়া যায় কি না তা অবশ্যই দেখা হবে।’’
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘‘নতুন শাবকদের আমরা প্রায় আড়াই বছর নজরদারিতে রাখব। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
বর্তমানে সাফারি পার্কে শীলা, স্নেহাশিস ছাড়াও আর একটি পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল বিভান আছে। অফিসারেরা জানান, শীলা, বিভান বা স্নেহাশিসদের বয়স ৩-৪ বছরের মধ্যে। জীবনের ২০ বছর বয়স অবধি বাঘেরা সন্তান প্রসব করার ক্ষমতা রাখে। শীলার এবারই প্রথম সন্তান হল। কমবয়সি আরও মহিলা বাঘ আনলে তারা পার্কে অন্তত ৪ থেকে ৫ বার সন্তান প্রসব করতে পারবে। তাতে বাঘের সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে বাড়তেই পারে।
৮০ দশক থেকে উত্তরবঙ্গের বৈকুন্ঠপুর, মহানন্দা, বক্সা, জলদাপাড়া বা গরুমারায় বাঘ হারিয়ে যাওয়া শুরু হয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু। তিনি জানান, তিনটি রয়্যাল বেঙ্গলের জন্ম অত্যন্ত সুখবর।
ওয়েস্ট বেঙ্গল জ়ু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি বিনোদ কুমার যাদব বলেন, ‘‘প্রোজেক্ট টাইগার বা বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে বক্সায় বাঘ ছাড়ার অনুমতি রয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশে জন্ম হওয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের শাবকদের নিয়ে তাই আমরা আশাবাদী।’’