উদ্ধার: উদ্ধার হওয়া অক্সিজেন, গ্যাস সিলিন্ডার ও বার্ন পাইপ। নিজস্ব চিত্র
গত সপ্তাহের সাত সকালের ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যা লাগোয়া ৩১ ডি জাতীয় সড়কের ধারে পরপর দোকানে চুরির খবর পেয়ে ছুটলেন এনজেপি থানার পুলিশ অফিসারেরা। মোবাইল দোকান ও সোনার দোকানের সেই লুঠের তদন্তে নেমেই অফিসারেরা কার্যত চমকে ওঠেন। গ্যাস কাটার ব্যবহার করে ভাঙা হয়েছে দোকানগুলির সাটার। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। সব শোনার পর অফিসারেরা বুঝে যান, দীর্ঘ দিন পরে আবার ঝাড়খণ্ডের দলগুলি শিলিগুড়িতে ঢুকছে। তার পরেই ব্যাঙ্ক, এটিএম তো বটেই জাতীয় সড়কে দুই পাশের দোকান, অফিসে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অফিসারদের আশঙ্কা, ভিনরাজ্যের ওই দলগুলি যে কোনও সময় আরও কোথায় হানা দিতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, দলগুলির ‘অপারেশনে’ দোকান বা অফিস ভাঙার কাজে লোহার রড, শাবলের বদলে সব সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়। হাত ও পিঠ ব্যাগে সেগুলি নিয়ে এসে কাজ হাসিল করা হয়।। অনেক সময় সিলিন্ডারগুলি ফেলেও যায়। চম্পট দেওয়ার কথা মাথায় রেখে সব টার্গেটই বাছা হয় জাতীয় সড়কের পাশে। এই ক্ষেত্রেও কামরাঙাগুড়ির ঘটনাস্থল তাই ছিল। ঘটনার পর থেকে ঝাড়খণ্ডের দলের খোঁজে ছোট মাপের লজ, হোটেল ও ভাড়া বাড়িগুলিতে তল্লাশি শুরু হলেও এখনও দুষ্কৃতীরা অধরা। ইতিমধ্যে ৫ সদস্যের একটি দলকে ঝাড়খণ্ডে পাঠিয়েছে শিলিগুড়ি পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত বছর বাগডোগরা ব্যাঙ্কে লুঠ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকা আর একটি ব্যাঙ্ক লুঠের চেষ্টার পর ঝাড়খণ্ডের দলগুলি কী ভাবে কাজ করে তা পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়। সে বার উদ্ধার হয়েছিল একাধিক অক্সিজেন, গ্যাস সিলিন্ডার, মিটার দেওয়া বার্ন পাইপ-সহ একাধিক সরঞ্জাম।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, ওই রাজ্যের ঝাড়খণ্ডের রাজমহল, পিয়ারপুর এলাকার দুষ্কৃতীরা ওই সরঞ্জাম ব্যবহারে অত্যন্ত পটু। শহরের বর্ধমান রোডের বাইকের শো-রুমের লক্ষাধিক টাকা লুঠের ঘটনায় ঝাড়খণ্ড ও মালদহ লাগোয়া এলাকার নাম উঠেছিল। অক্সিজেন ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে বাগডোগরার ব্যাঙ্কে ভল্ট-সহ ১৬টি লকার দলটি কেটে ফেলেছিল তারা।
ঝাড়খণ্ডের নামকরা দুষ্কৃতী হাসান খান ও কামাল হাসানকে ধরার পর তা আরও স্পষ্ট হয়। মাঝে মাটিগাড়ার আর একটি ব্যাঙ্কে চুরির ঘটনা ঘটলেও সেখানে শাবল, রেঞ্জ মিলতেই বোঝা যায় তা স্থানীয় দলের কাজ। পরে ধরাও পড়ে ৩ জন। তাই আবার দলগুলি সক্রিয় হয়েছে বুঝেই সতর্ক অফিসারেরা।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই বাইরে থেকে নিয়মিত লোকজন ঢোকে। এবার চুরির পরেই আমরা সর্তক হয়েছি। দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে।’’