সালিশিতে চোর অপবাদে আত্মঘাতী কিশোরী, ক্ষোভ

Advertisement

জলপাইগুড়ি

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

সালিশি সভায় চুরির অপবাদে অপমানিত হয়ে কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে রাজগঞ্জের সুখানি এলাকা৷ অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন অনেকেই। ঘটনায় শাসক দলের নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূল নেতারা৷ তবে জেলা তৃণমূলের নেতারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনা তাঁরা সমর্থন করছেন না। রবিবার পিঙ্কি বেগম (১৭) বলে ওই কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনার জেরে সাত জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই সাত জনই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সপার অমিতাভ মাইতি জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে৷

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কুড়ি আগে সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের চড়িয়াপাড়া এলাকায় এক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়৷ ওই সময় অন্য পাড়া পড়শিদের মতোই পিঙ্কি ও তার তিন বান্ধবীও সেখানে যায়৷ তখনই পিঙ্কির এক বান্ধবী সেখানে একটি মোবাইল কুড়িয়ে পেয়ে তা নিজের কাছে রেখে দেয় বলে দাবি৷ পরে জানা যায়, যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁরই মোবাইল খোওয়া গিয়েছে। এর পরে শনিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুখানির বেঙ্গুপাড়ায় পিঙ্কির বাড়িতে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী যান বলে অভিযোগ৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান এসরাইল হকও। অভিযোগ, সেখানেই মোবাইল ফোন চুরি নিয়ে সালিশি সভা বসে৷

পিঙ্কির বাবা নূর ইসলামের দাবি, তাঁর মেয়ে প্রথমেই সেখানে জানিয়ে দেয়, মোবাইলটি তার এক বান্ধবী কুড়িয়ে পেয়ে তার নিজের কাছে রেখেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে সেই বাড়ি থেকে ফোনটি পাওয়াও যায়৷ নূর বলেন, ‘‘তারপরও পিঙ্কিকে মোবাইল চোরের অপবাদ দেওয়া হয়৷ এমনকি তার নামে থানায় অভিযোগ জানানোরও হুমকি দেওয়া হয়৷’’ নূরের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে খুবই ভেঙে পড়ে৷ রাতেই আমায় বলতে থাকে, চোর অপবাদ দেওয়ার পরে কী করে সবাইকে মুখ দেখাব?’’ তবে পিঙ্কি যে আত্মহত্যা করবে, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি।

Advertisement

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতের ঘটনার পরই মনমরা হয়ে পড়েছিল পিঙ্কি৷ রবিবার সকালের পর থেকে তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না৷ শেষ পর্যন্ত দুপুরে বাড়ির কাছেই একটি গাছে তার ঝুলন্ত দেহ মেলে৷

উপপ্রধান এসরাইলের নাম অভিযোগে নেই। পিঙ্কির বাবা ও কাকা দাবি করেছেন, এসরাইল তাঁদের বাড়ি গিয়েছেন। এসরাইল নিজেও তা স্বীকার করেছেন। কেন তিনি সেখানে গিয়ে সালিশি সভা বসিয়েছিলেন? এসরাইলের দাবি, ‘‘মোবাইল ফোনটি ওই বাড়িতে রয়েছে জানতে পেরে সেখানে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু কোনও সালিশি সভা হয়নি৷’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি শুধু বলেছিলাম, কেউ মোবাইলটা পেয়ে থাকলে যেন ফেরত দিয়ে দেয়৷ তবে যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য রফিকুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘‘মোবাইল চুরি নিয়ে পিঙ্কিদের বাড়িতে একটা সালিশি সভা বসেছিল শুনেছি ৷ সেখানে মেয়েটিকে কী বলা হয়েছে জানি না৷ তবে পরেরদিন সে আত্মহত্যা করে৷’’

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূলের জেলা নেতারা৷ দলের কার্যকরী সভাপতি তথা সাংসদ বিজয় বর্মন বলেন, ‘‘সুখানিতে যা হয়েছে সেটা অন্যায়৷ এই অন্যায়ের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত৷’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement