মরণ-পণ: হাসপাতালে পম্পি রায়ের দেহ। নিজস্ব চিত্র
বিয়ে পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আশীর্বাদের আগেই পণ বাড়ানোর দাবি করে পাত্রপক্ষ। সেই অপমানে আত্মহত্যা করলেন ধূপগুড়ির এলাকার বাসিন্দা পম্পি রায় (১৯)। রাত পর্যন্ত শোক সামলে পুলিশের কাছে যাওয়ার সময় হয়নি পরিবারের। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানাকে জানিয়ে ময়নাতদন্ত করা হলেও পুলিশের বক্তব্য, তারা কিছু শোনেনি, জানে না। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করা হয়নি।
পম্পিদের বাড়ি ধূপগুড়ির কাছে মাগুরমারি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালীরহাট ডাঙাপাড়ায়। ১৬ এপ্রিল কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা প্রদীপ রায়ের বাড়ির লোক এসে বিয়ে ঠিক করে যান। তখনই ঠিক হয়, ৫৫ হাজার টাকা নগদ, একটি মোটরবাইক, আসবাবপত্র ও মেয়ে সাজানোর উপযুক্ত সোনার গয়না দেবে পাত্রীপক্ষ। পম্পির বাবা বিশ্বনাথ রায় তাতে রাজি হন। পরের রবিবার তিনি মেখলিগঞ্জে পাত্রকে আশীর্বাদ করতে যাবেন, তা-ও ঠিক হয়ে যায়।
পম্পির বাড়ির অভিযোগ, কিন্তু পরের দিন ঘটক মারফত পাত্রের বাবা শিপ্রা রায় জানান, তাঁদের পাত্রী পছন্দ হয়নি। এখন পণের পরিমাণ না বাড়ালে বিয়ে সম্ভব নয়।
এই কথা শোনার পরেই লজ্জা, অপমানে পম্পি বুধবার বিকেলে বিষ খান, অভিযোগ তাঁর বাড়ির লোকের। তাঁকে প্রথমে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। অবস্থার অবনতি হলে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই রাত আড়াইটে নাগাদ পম্পি মারা যান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পম্পির দেহ বাড়িতে আসার পরে বাবা কারও সঙ্গে কথা বলতে চাননি। থানায় অভিযোগ করা হবে কি না জানতে চাইলে পম্পির দাদা পঙ্কজ বলেন, ‘‘আমরা আইনের পথে যাওয়ার কথা ভাবছি।’’ কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছিলেন কেন? পম্পির খুড়তুতো দাদার নামও প্রদীপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ের বয়েস হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে দিতেই হতো।’’ তা বলে এত টাকা পণ দিয়ে? তাঁর জবাব, ‘‘পণ ছাড়া কোথায় বিয়ে হয়!’’
পাত্রপক্ষের দাবি, তাঁরা এই আত্মহত্যা সম্পর্কে কিছু জানেন না। বিয়ের কথা হয়েছিল, সেটা স্বীকার করে তাঁরা জানিয়েছেন, মেয়ে পছন্দ হয়নি। বাড়ির লোকের বক্তব্য, ‘‘অনেক বিয়ে তো এক দিন আগেও ভেঙে যায়।’’ পণ বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়নি, দাবি তাঁদের।