দাঁতালের হানায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে বাড়ি। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।
বছর দশেক আগে এক দাঁতালের হামলায় প্রাণ গিয়েছিল বাবার। এবার আরেক দাঁতালের হামলায় মৃত্যু হল মেয়েরও। ডুয়ার্সের মেটেলি থানার বড়দিঘি চা বাগানের ঘটনা।
গত শুক্রবার গভীর রাতে গরুমারা জাতীয় উদ্যান ঘেঁষা বড়দিঘি চা বাগানে একটি দাঁতাল হাতি ঢুকে আসে। রাত একটা নাগাদ প্রবল বৃষ্টির জেরে বাগানে হাতির অনুপ্রবেশ কেউ বুঝতে পারেননি। বাগানের পাহাড়িয়া লাইনের শ্রমিক মহল্লাতে ঢুকে পড়ে হাতিটি। দরমার বেড়ার ঘরে তখন ঘুমিয়ে ছিলেন পোমা তিলি কামারিয়া (৪৫)। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে তাঁকে ঘরের বাইরে এনে পায়ের আঘাতে পিষে দেয় হাতিটি। হাতির আক্রমণের সময় অন্য ঘরে শুয়েছিলেন পোমার ছেলে অনিল তিলি কামারিয়া। বুনোটির তাণ্ডবে অনিলের মাথায় ঘরের বেড়া ভেঙে পড়ে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘চোখের সামনেই মাকে শেষ হয়ে যেতে দেখেও কিছুই করতে পারলাম না।’’ বছর উনত্রিশের অনিলকে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে আসা হয় চালসার মঙ্গলবাড়ি ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে। প্রাথমিক শুশ্রুষার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ দিন অনিল নিজেই জানান, বছর দশেক আগে তাঁর মায়ের বাবা শনিয়া ভূমিচ এই পাহাড়িয়া লাইনেই দাঁতাল হাতির হানায় মারা যান। এ দিন দাঁতালের হানায় বড়দিঘির পাহাড়িয়া লাইনের মোট ছ’টি শ্রমিক আবাস ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
গরুমারার জঙ্গল বাগানের একেবারেই পাশে থাকায় বারবার বাগানে হাতির হানা হচ্ছে বলে জানান বনকর্মীরা। যে এলাকায় এ দিন দাঁতালের হামলা হয়, তার খুব কাছেই রয়েছে জলপাইগুড়ি বনবিভাগের বড়দিঘি বিটের দফতর। শনিবার বিকেলে বাগানের শ্রমিকেরা হাতির হামলা থেকে নিরাপত্তার দাবিতে বিট অফিসে বিক্ষোভ দেখান। ওই বিটের আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাসও ওই পরিবারের দু’জনের হাতির হানায় প্রাণ হারানোর বিষয়টি জানেন। তিনি বলেন, ‘‘রিপোর্ট পাঠিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণ যাতে মেলে আমরা সেই ব্যবস্থা শুরু করেছি।’’
বাগান জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্কের ছায়া। বাগান শ্রমিক নাথো মাঙ্কি মুণ্ডা, শনচরুয়া মালপাহাড়িয়ারা জানান, বনকর্মীরা হাতি তাড়াতে এলেও হাতিদের সামলানো যাচ্ছে না। কোনওদিন হাতির হামলাতেই তাঁদের প্রাণ হারাতে হবে বলে আশঙ্কায় শ্রমিকরা।