মোর্চার আন্দোলনে এ বার অগ্নিগর্ভ কালিম্পংও। দার্জিলিঙের পর এ বার নতুন গঠিত এই জেলার একটি পুলিশ ফাঁড়ি-সহ একাধিক সরকারি ভবনে বৃহস্পতিবার আগুন ধরিয়ে দিল মোর্চার লোকজন। দার্জিলিঙ থেকে মোর্চা নেতৃত্ব অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতেই বেলা সাড়ে ১০টা থেকে কালিম্পঙে বিভিন্ন দোকান, বাজার বন্ধ করাতে নেমে পড়ে মোর্চা। গাড়ি চলাচলও তাঁরা বন্ধ করে দিতে শুরু করেন। মিছিল নিয়ে প্রথমে কালিম্পং থানা, পরে জেলাশাসকের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ অবস্থান চলতে থাকে।
বিক্ষোভ শুরুর কিছু ক্ষণ পরেই খবর আসে পেডং পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ মোর্চার দিকেই। সে সময় সেখানে কয়েকজন পুলিশকর্মীও ছিলেন। ওই ঘটনায় মোর্চার জেলা কমিটির এক নেতাকে ধরে পুলিশ। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, তাঁর নাম বিনোদ প্রধান। বেলা গড়াতেই একাধিক জায়গা আগুন ধরানোর অভিযোগ আসতে থাকে।
পেডং ফাঁড়ির পরে বেলা পৌনে একটা নাগাদ বারবটে রেশম চাষ দফতরের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
হিলটপ ট্যুরিস্ট লজে আগুন ধরানোর চেষ্টা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে সেই চেষ্টা রুখে দেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার পৌঁছোন। আগুন লাগানোর উপকরণ-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে এক কাউন্সিলরও রয়েছেন। জেলাশাসক বিশ্বনাথ জানান, পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পেডং ফাঁড়িতে আগুন লাগানোর সময় কয়েক জন পুলিশ কর্মী সেখানে ছিলেন।
কালিম্পং জেলা পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব বলেন, ‘‘পে়ডং ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হিলটপ ট্যুরিস্ট লজে আগুন লাগানোর সময় সে সব উপকরণ-সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়া, বারবট এলাকায় রেশন চাষের অফিসে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’’ দলের সমর্থকদের গ্রেফতারের খবর পেতেই জেলাশাসকের অফিসের সামনে মোর্চার কর্মী সমর্থকেরা জোরদার বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মোর্চার কালিম্পং জেলা সভাপতি রামবাহাদুর ভুজেল বলেন, ‘‘আমাদের এক কাউন্সিলর এবং বারবট এলাকা থেকে এক বর্ষীয়ান নেতাকে মিথ্যে অভিযোগে ধরা হয়েছে। দার্জিলিঙে জিটিএ-র প্রধান তথা দলের শীর্ষনেতার বাড়িতে যে ভাবে পুলিশ ঢুকছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’’
কালিম্পং অশান্ত হয়ে উঠলেও মোর্চার বিরোধী দল জন আন্দোলন পার্টি (জাপ) অবশ্য চুপ। সম্প্রতি মোর্চার বিরুদ্ধে তাদের যুবরা ধর্না মঞ্চ গড়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। পরে অনশনও করেন ৬ জন। তবে মোর্চার এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কালিম্পং অশান্ত হয়ে উঠলেও তাঁরা কেন চুপ, তা নিয়েও শহরে আলোচনা চলছে।
তৃণমূল অবশ্য চুপ নেই। দার্জিলিঙের মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিন গোলমালের ঘটনার একদিন পরেই তারা কালিম্পঙে প্রতিবাদ মিছিল করে। পাহাড় শান্ত রাখার আহ্বান জানায়। তৃণমূলের কালিম্পং জেলা সভাপতি সতীশ থিং এ দিন বলেন, ‘‘সরকারি সম্পত্তিতে আগুন জ্বালিয়ে কালিম্পংকে অশান্ত করার ঘটনার আমরা বিরোধিতা করছি।’’
বন্ধের সমর্থনে এ দিন কার্শিয়াঙে মিছিল করে মোর্চা। কার্শিয়াং থেকে মোর্চার একজনকে এ দিন পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মোর্চার ডাকা বন্ধে দুপুরে মিরিক বাজারের অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুরসভায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি যানবাহনও চলেছে। পাহাড়ের নানা শহরেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে কিছুক্ষণের জন্য জনজীবন ব্যাহত হয়।