নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ মন্ত্রী

ব্যস্ত বাজারে গ্রেনেড উদ্ধারে পুলিশের নজরদারির নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতিও তিনি।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৮
Share:

বিষ্ফোরণ: গ্রেনেডটি নষ্ট করার বিভিন্ন মুহূর্ত। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

রাত পোহাতেই বোমার মতো দেখতে জিনিসটাকে সত্যিকারের গ্রেনেড বলে চিহ্নিত করল সিআইডি। শনিবার শহরের বিধান মার্কেট উদ্ধার হয় একটি গোলাকার বস্তু। সেটা দেখে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। যদিও অনেকে সেটিকে খেলার জিনিস বলেও মনে করেছিলেন। শনিবার রাতেই সেটিকে বিস্ফোরক বলে সন্দেহ করে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিআইডি। রবিবার পরীক্ষার পরে তাদের সন্দেহকেই সিলমোহর দেয় দিল সিআইডি। এ দিন সকালে নৌকাঘাটের কাছে মহানন্দার চরে গ্রেনেডটি ফাটিয়ে নষ্ট করে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড।

Advertisement

ব্যস্ত বাজারে গ্রেনেড উদ্ধারে পুলিশের নজরদারির নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতিও তিনি। এ দিন গৌতম নাকা-তল্লাশি বাড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করেন। ভিড় ঠাসা বিধান মার্কেটে গ্রেনেড কুড়িয়ে পাওয়ার ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিষয়টি খুবই চিন্তার। মুখ্যমন্ত্রী বার বার বলেছেন, চারদিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত, ভিন্‌রাজ্যের সীমানা। নাশকতার কাজে সেফ করিডর হিসেবে ব্যবহার হয়। আরও বেশি করে নাকা তল্লাশি বাড়াতে হবে পুলিশকে।’’ দুর্ঘটনা ঘটলে সত্যিই মোকাবিলা করা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আতঙ্কিত এলাকার ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় ঘুম উড়েছে বিধান মার্কেট, হংকং মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। চিন্তায় প্রশাসনের কর্তারাও।

বাজারের রাধাগোবিন্দ মন্দিরের কাছেই একটি বন্ধ দোকানের সামনে চকোলেট বোমার সাইজের গ্রেনেড পেয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ ভেবেছিলেন লাইটার। আবার কেউ ভেবেছিলেন, নতুন ডিজাইনের সুগন্ধির শিশি। কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, গ্রেনেড হাতে নিয়ে নাড়াচাড়াও শুরু হয়েছিল প্রথমে। পরে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশ ডাকা হয়। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ব্যবসায়ীদের হালকা মনোভাব বদলে গেল দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে। মন্দিরের কাছে দোকান রয়েছে মনোজ বর্ধন, সঞ্জিত ঘোষের। সঞ্জিত বলেন, ‘‘আগে বিধান মার্কেটে চুরি হয়েছে, আগুন লেগেছে। কিন্তু পায়ের কাছে তাজা গ্রেনেড পড়ে ছিল জানার পরেই আতঙ্কে ভুগছি আমরা।’’ মনোজ বলেন, ‘‘পুজোর আগে এত ভিড়ে দুর্ঘটনা ঘটলে কী হত?’’

Advertisement

বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি এবং হংকং বাজার ব্যবসায়ী সমিতি জরুরি বৈঠক করছে। বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাপি সাহা বলেন, ‘‘আমরা ব্যবসায়ীদের সচেতন করব।’’ বন্ধ দোকানের সামনে পড়ে থাকা ওই গ্রেনেডের পাশেই রাখা ছিল প্রচুর মোটরবাইক, স্কুটার। বিস্ফোরণ ঘটলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতে বলে পারত তাঁদের দাবি। এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (পূর্ব) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ফোন করলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করার পরে তিনি শিলিগুড়ি পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সেই অফিসারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বিধান মার্কেটের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আরও বেশি নজরদারি প্রয়োজন। শহরের বাইরে থেকে সারাদিন কয়েক হাজার মানুষ ওই এলাকায় আসেন। একদল ব্যবসায়ীর অভিযোগ, শনিবার গ্রেনেড উদ্ধার পর্বের প্রায় চার ঘণ্টা ঘটনাস্থলে শিলিগুড়ি পুলিশের কোনও বড় কর্তার দেখা মেলেনি। বোমা কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকে সরিয়ে নেওয়া পর্যন্ত থানার সঙ্গে স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সিআইডির সমন্বয় সঠিক ছিল না বলেও তাঁদের অভিযোগ। ভরা বাজারে বোমা ফাটলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা পুলিশের রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলছেন আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন