একটা ফোনেই রক্ত দিতে হাজির হামিদরা

সামাউল, হামিদ-সহ দলে এই মুহূর্তে সদস্য সংখ্যা ৩১০। প্রায় সব গ্রুপের রক্তদাতা আছেন সেই দলে। একটা ফোন করে রক্তের গ্রুপ বললেই রক্তদাতা পৌঁছে যান হাসপাতালে। জঙ্গিপুর, বহরমপুর তো বটেই বেশ কয়েক জন রক্তদাতা এ ভাবে রাঁচিতে গিয়েও রক্ত দিয়ে এসেছেন।

Advertisement

বিমান হাজরা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ১২:৫৫
Share:

সদস্য সংখ্যা ৩১০। প্রায় সব গ্রুপের রক্তদাতা আছেন সেই দলে।

একচিলতে চালের দোকান‌টার সামনে থিকথিকে‌ ভিড়। আব্দুল হামিদের ফোনটা এল ঠিক সেই সময়েই।

Advertisement

—‘সামাউল ভাই, তোমার তো ‘বি পজিটিভ’?

—‘হ্যাঁ, কোথাও যেতে হবে?’

Advertisement

—‘বহরমপুর। আমাদের পাশের গ্রামের শঙ্করী রবিদাস খুব অসুস্থ। রক্ত লাগবে।’

শনিবার সাতসকালে দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে দিয়ে সটান বহরমপুরের বাস ধরেন মহম্মদ সামাউল হক। বেসরকারি একটি হাসপাতালে বছর ষাটের শঙ্করীদেবীকে রক্ত দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন সন্ধ্যায়। বৃদ্ধার পরিজনদের তিনি আশ্বাসও দিয়ে এসেছেন, ‘‘রক্তের জন্য ভাববেন না। শুধু একটা ফোন করে দেবেন।’’

সমশেরগঞ্জের ঘনশ্যামপুরের বাসিন্দা শঙ্করীদেবী রক্তাল্পতা-সহ বেশ কিছু সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর পরিবারের লোকজন রক্তের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তখন ওই বৃদ্ধার এক আত্মীয় ফোন করেন পাশের গ্রাম দেবীদাসপুরের হামিদকে। শঙ্করীদেবীর স্বামী রামচন্দ্র রবিদাস বলছেন, ‘‘সামাউল ও হামিদদের এই ঋণ আমি জীবনে ভুলব না।’’

সামাউল, হামিদ-সহ দলে এই মুহূর্তে সদস্য সংখ্যা ৩১০। প্রায় সব গ্রুপের রক্তদাতা আছেন সেই দলে। একটা ফোন করে রক্তের গ্রুপ বললেই রক্তদাতা পৌঁছে যান হাসপাতালে। জঙ্গিপুর, বহরমপুর তো বটেই বেশ কয়েক জন রক্তদাতা এ ভাবে রাঁচিতে গিয়েও রক্ত দিয়ে এসেছেন।

হামিদ জানান, তিনি ফরাক্কা কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়তেন। সেই সময় কলেজের এক ছাত্রীর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর ‘এ পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত দরকার। অথচ ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের আকাল চলছিল। পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে সে বার রক্ত দিয়ে এসেছিলেন হামিদ। সেই শুরু।

২০১৩ সালে কলেজ পাশ করে বেরনোর পরেই হামিদ ও তাঁর বন্ধুরা মিলে তৈরি করেন ‘রেড হার্ট’ ক্লাব। কলেজ পড়ুয়া, স্কুল শিক্ষক, ব্যবসায়ী-সহ নানা পেশার লোকজন যোগ দিয়েছেন ওই ক্লাবে। হামিদের বাড়ির একটি ঘরেই সদস্যরা মাঝেমধ্যে বৈঠক করেন। ছুটির দিনে ধুলিয়ান ব্লক মোড়ের একটি দোকানে। তাঁদের ফোন নম্বরও এখন মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছে।

ক্লাবের সভাপতি হামিদ জানাচ্ছেন, সুতি, ফরাক্কা ও সমশেরগঞ্জের ১৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের দায়িত্বও তাঁরা নিয়েছেন। হামিদ, সামাউল, মহম্মদ বাবর আলিরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘রামই হোক আর রহিম রক্তের অভাবে কাউকে মরতে দেব না।’’ রোগী কিংবা তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছুই নেন না হামিদরা। সদস্যরা প্রতি মাসে সংস্থায় ২০ টাকা করে চাঁদা দেন। যাতায়াতের খরচ সেখান থেকেই উঠে আসে। হামিদরা বলছেন, ‘‘কষ্ট করে শুধু একটা ফোন করুন। আমরা হাজির হয়ে যাব।’’

সমশেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক গোলাপ হেসেন বলেন, ‘‘ওঁরা বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন কাজ করছেন। এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রচুর মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন