পানশালায় গানের সুর ঢেকে যায় গুলির শব্দে

সন্ধ্যা নামলেই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় ছড়িয়ে থাকা পানশালায় গানবাজনার শব্দে কান ঝালাপালা হওয়া নতুন কিছু নয়। ইদানীং মাঝেমধ্যেই নাচগানের হুল্লোড়কে গুলির আওয়াজ ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাতেই পানশালার মালিক, কর্মী ও গায়িকাদের অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

পানশালার সিসিটিভি ফুটেজে নাচ-গানের দৃশ্য। — নিজস্ব চিত্র

সন্ধ্যা নামলেই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় ছড়িয়ে থাকা পানশালায় গানবাজনার শব্দে কান ঝালাপালা হওয়া নতুন কিছু নয়। ইদানীং মাঝেমধ্যেই নাচগানের হুল্লোড়কে গুলির আওয়াজ ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাতেই পানশালার মালিক, কর্মী ও গায়িকাদের অনেকেই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি পাঞ্জাবের ভাতিণ্ডায় বিয়ের আসরে এক মদ্যপের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় কুলবিন্দর কৌর নামে এক অন্ত্বঃসত্ত্বা তরুণীকে মঞ্চেই গুলি করে মারার পরে শিলিগুড়ির পানশালার গায়িকা-নতর্কীদের অনেকের দুশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছে। পানশালা সূত্রেই পুলিশকে জানানো হয়েছে, হালে এক ব্যবসায়ী যুব মাঝেমধ্যেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিভলবার নিয়ে পানশালায় ঢুকে ‘বীরত্ব’ জাহিরের চেষ্টা করছেন বলেই গায়িকা-নর্তকীদের অনেকে ভীত-সন্ত্রস্ত। সেই উদ্বেগের খবর পৌঁছেছে পুলিশের কাছেও। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেছেন, ‘‘পানশালায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকার ব্যাপারে কিছু অভিযোগ শুনেছি। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত করে কড়া পদক্ষেপের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

ঘটনা হল, পানশালার কর্মীদের অনেকেই শিলিগুড়ি শহরের ধনী পরিবারের কয়েক জন যুবকের পিস্তল নিয়ে দাপাদাপিতে সিঁটিয়ে রয়েছেন। ওই কর্মীদের পক্ষ থেকে ভক্তিনগর, প্রধাননগর ও মাটিগাড়া থানার অফিসারদের একাংশকে অলিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। সেই সুবাদেই পুলিশের বড় কর্তাদের কাছে নানা অভিযোগ পৌঁছেছে।

যেমন, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পিসি মিত্তল বাস টার্মিনাস লাগোয়া এলাকায় একটি পানশালার বাইরে গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে উঠেছিল। মুহূর্তের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর পরেই সেবক রোডের একটি শপিং মলের কাছে থাকা ‘সিঙ্গিং-বারে’ রিভলধারী এক ব্যবসায়ী যুবক সিগারেট ছোঁডায় এক তরুণী গায়িকার শাড়িতে ফুটো হয়ে যায়। তা নিয়ে হইচই হলে ওই মদ্যপ ব্যবসায়ী রুমাল বার করার অছিলায় পকেটের পিস্তল দেখালে কর্মীরা বড় গোলমালের আশঙ্কায় পিছিয়ে যান বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে।

Advertisement

বিধি অনুযায়ী, পানশালা, রেস্তোরাঁয়া যে কেউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যেতে পারেন না। সে জন্য বিশেষ অনুমতি দরকার। আবগারি দফতর ও পুলিশের তা দেখার কথা। পানশালার তরফে নিয়মিত ভিডিও ফুটেজ পাঠানোরও কথা। পানশালার কর্মী-গায়ক-গায়িকাদের একাংশের বয়ান অনুযায়ী, সিসি ক্যামেরা রোজই নির্দিষ্ট সময়ে কয়েকটি এলাকায় কাজ করে না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিস্তল বার করে আতঙ্ক ছড়িয়ে কাজ হাসিলে চেষ্টা করে মদ্যপদের একাংশ।

শহরের সেবক রোডের একটি পানশালার মালিক জানান, নেশার ঘোরে গায়িকা, নর্তকীদের একাংশকে কাছে টানতে মদ্যপদের কয়েকজনের উতলা হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তা নিয়ে ঠেলাঠেলি, গালাগালি, মারপিটের ঘটনাও নতুন কিছু নয়। অতীতে নর্তকীর দখল নিয়ে অ্যাসিড ছোঁডার ঘটনাও ঘটেছে। এখন পিস্তল দেখিয়ে দাপাদাপি শুরু হওয়ায় পানশালা মালিকদের অনেকেই উদ্বিগ্ন।

পানশালা মালিক সগঠনের একাধিক সদস্য জানান, তাঁরা শীঘ্রই ফের বৈঠক ডেকে সকলকে সতর্ক করে দেবেন। তবে পানশালার বাইরে গুলি ছোঁডার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে জন্য পুলিশকেই নজরদারি বাড়াতে হবে বলে পানশালা মালিকদের কয়েকজন জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের কয়েকজন অফিসার জানান, প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্তে এক ব্যবসায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। আরও বিশদে তথ্য সংগ্রহের পরে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন