উত্তর দিনাজপুর জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাপ্রাপ্ত উপভোক্তা মহিলাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
গত দু’বছরে উত্তর দিনাজপুর জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাপ্রাপ্ত উপভোক্তা মহিলাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলার ন’টি ব্লকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা আশাকর্মীদের মাধ্যমে জেলার ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই সব মহিলাদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। লোকসভা নির্বাচনের মুখে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার দাবি, সরকারি নির্দেশেই গত দু’বছরে জেলার নয়টি ব্লকে তিনটি ক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাপ্রাপ্ত মহিলাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে সেই কাজ শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে ই-মেল করে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে জেলার ন’টি ব্লকে জননীসুরক্ষা যোজনা, বাংলা মাতৃপ্রকল্প ও প্রসূতি প্রতীক্ষালয়ের পরিষেবা নেওয়া মহিলাদের সংখ্যা, নাম ও ঠিকানা জানানোর নির্দেশ দেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ই-মেলের মাধ্যমে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে গত দু’বছরে জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, ইটাহার, হেমতাবাদ, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকের ওই তিনটি ক্ষেত্রে পরিষেবাপ্রাপ্ত প্রায় ১২ হাজার উপভোক্তা মহিলাদের সংখ্যা, নাম ও ঠিকানা জানিয়ে দেয়। এর পরেই ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে মুখ্যমন্ত্রীর ওই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠায়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশবাবুর বক্তব্য, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তায় জননীসুরক্ষা যোজনা, বাংলা মাতৃপ্রকল্প ও প্রসূতি প্রতীক্ষালয়ের পরিষেবা নেওয়া মহিলাদের নাম ও ঠিকানা লিখে পাঠিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সেই শুভেচ্ছাবার্তা ছাপিয়ে তা ন’টি ব্লকে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা গত বৃহস্পতিবার থেকে সেই শুভেচ্ছাবার্তা সংশ্লিষ্ট ব্লকের আশাকর্মীদের মাধ্যমে জেলার ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দাম ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের অভিযোগ, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেলার ন’টি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের জননীসুরক্ষা যোজনা ও বাংলা মাতৃপ্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রসূতি প্রতীক্ষালয়ের সুবিধা নেওয়া মহিলাদের ভোট পেতেই তৃণমূল সরকারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব পালের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের মুখে জেলার ন’টি ব্লকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাপ্রাপ্ত উপভোক্তা মহিলাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা তুলে দেওয়ার ঘটনায় তৃণমূলের ভোটের রাজনীতি স্পষ্ট। তবে তৃণমূল সরকারি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বাসিন্দাদের প্রভাবিত করতে পারবে না।
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাপ্রাপ্ত উপভোক্তা মহিলাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের সিদ্ধান্ত। ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’