থানার ওসি ‘দালাল’-এর কাজ করছেন কি না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হাইকোর্টের প্রশ্ন, ওসি কি তোলাবাজিও করছেন?
দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার ওসি-র বিরুদ্ধে চাপ দিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন রাজ্য খাদ্য দফতরের এক কর্মী। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশের ডিজি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের সাত কর্তার কাছে সেই অভিযোগ জানানোর পরেও ওসি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই কারণে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন ওই সরকারি কর্মী।
বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। সরকারি কর্মীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বংশীহারি থানা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আইনজীবী অভিযোগ করেন, বাড়িওয়ালার ছেলে তাঁর মক্কেলের উপর চাপ সৃষ্টি করে সাদা স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নিয়েছে। এবং পরে দেখা গিয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে ওই সরকারি কর্মী বাড়িওয়ালার ছেলেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবেন। এই পরিস্থিতিতে থানার ওসি বিশ্বজিৎ ঘোষ গত ৩ এপ্রিল তাঁর মোবাইল থেকে সরকারি কর্মীকে ফোন করে থানায় ডাকেন এবং ওই টাকা মেটানোর জন্য চাপ দেন। অভিযোগ, ওসি সরকারি কর্মীকে হুমকি দেন, টাকা না মেটানো হলে বাড়িওয়ালার পুত্রবধূকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জানাবেন। ৪ এপ্রিল থানার ফোন থেকে ফের যোগাযোগ করেন ওসি। এ বারও একই কথা বলেন। যদিও, বংশীহারি থানার ওসি যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শ্রীজীব জানান, ১০ মে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে ডিজি, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের সাত কর্তার কাছে ওসি-র বিরুদ্ধে নালিশ জানান ওই সরকারি কর্মী। তাতেও কাজ হয়নি। বরং চিঠির কথা জানতে পেরে ওসি পুনরায় তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলি শুভব্রত দত্তের বক্তব্য জানতে চান। শুভব্রত জানান, ডিজি-র কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। তা শুনে শ্রীজীব রেজিস্টার্ড পোস্টের নথি আদালতে দেখান। তা দেখে বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলিকে বলেন, ‘‘ডিজি যে চিঠি পাননি, তা কি লিখিত জানিয়েছেন?’’ সরকারি কৌঁসুলি জানান, ওই সরকারি কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি অভিযোগ রয়েছে।
তা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশে বলেন, ‘‘আর, থানার ওসি-র বিরুদ্ধে কতগুলি অভিযোগ রয়েছে?’’ তার পরেই বিচারপতি দত্ত মন্তব্য করেন, ‘‘ওসি কি দালালের কাজ করছেন? না তোলাবাজি করছেন?’’ ওসি বিশ্বজিৎবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে। যা বলার মহামান্য আদালতের কাছেই বলব।’’
এ দিন বিচারপতি দত্ত সরকারি কৌঁসুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে এই বিষয়ে ডিজি-র একটি রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে।