জমি এখনও মেলেনি। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাটি-বালি না পাওয়ার সমস্যাও। দুইয়ের গেরোয় উত্তরবঙ্গে থমকে গিয়েছে পূর্ব-পশ্চিম মহাসড়কের কাজ।
দুটি বিষয়ই রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, দু’টি বিষয় নিয়েই রাজ্যকে পরের পর চিঠি দেওয়া হলেও ফল মেলেনি। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা মেনে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়েই এখন ঘোরতর সংশয়।
গুজরাতের পোড়বন্দর থেকে অসমের শিলচর পর্যন্ত চার লেনের প্রস্তাবিত মহাসড়কটির কাজ বকেয়া রয়েছে শুধু উত্তরবঙ্গেই। শিলিগুড়ি লাগোয়া ঘোষপুকুর থেকে আলিপুরদুয়ারের সলসলাবাড়ি পর্যন্ত ১৫৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হলেই মহাসড়কের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফুলবাড়ি থেকে ধূপগুড়ি পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয়। রাস্তা তৈরিতে ৩১০ একর জমির প্রয়োজন থাকলেও মিলেছে মাত্র ২০২ একর। সাধারণত ৯০ শতাংশ জমি না পেলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে না। তবে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ ১১০০ কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কায় কাজ শুরু করে দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। তাতেও বিপত্তি মেটেনি। যে ২০২ একর জমি সরকারি ভাবে রাজ্য অধিগ্রহণ করেছে, তার মধ্যেও ৬৫ একরে কাজ শুরু করতে গিয়ে বাধা পেয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা।
চার লেনের সড়ক তৈরির জন্য প্রচুর মাটি এবং বালি প্রয়োজন। ১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ন্যূনতম একশো ট্রাক মাটি-বালি দরকার বলে দাবি। জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নদী খাত থেকে বালি-পাথর-মাটি তোলায় রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন হয়। দাবি, রাজ্য উত্তরবঙ্গে যেখানে অনুমতি দিচ্ছে, সেখানে বড় পাথর মেলে। বালি-মাটি তোলার জন্য প্রশাসনের কাছে কয়েকটি এলাকা থেকে অনুমতি চেয়েছিল মহাসড়ক তৈরির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি সংস্থা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘সব নিয়ম মেনেই আমরা আবেদন করেছি। অনুমতি দেওয়া অথবা না দেওয়া কিছুই আমাদের জানানো হচ্ছে না।’’
বাইরের রাজ্য থেকে মাটি-বালি আনলে কয়েক গুণ বেশি খরচ হবে, এমন আশঙ্কা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। তাই তারা আপাতত কাজ বন্ধ করে রেখেছে। জমির সমস্যা মেটাতে এর আগে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। জমি, মাটি-বালির সমস্যা নিয়েও তিনি খোঁজ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিকে কাজ শুরুর পরে রাস্তার বিভিন্ন অংশে দু’দিকে খোঁড়া হয়েছে। তার ফলে রাস্তা ক্রমাগত ভাঙছে। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় নিত্য যানজট এবং খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়ে চলাচলের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদেরও।
সমস্যা কোথায়
কাজ শুরু: ৮৪ কিমি, ঘোষপুকুর থেকে ধূপগুড়ি।
শুরু: ডিসেম্বর ২০১৫ n শেষ (সম্ভাব্য): জুন ২০১৮
বরাদ্দ: ১১০০ কোটি টাকা
জমি চাই: ৩১০ একর
অধিগ্রহণ হয়েছে: ২০২ একর
অধিগৃহীতে কাজে বাধা: মোহিতনগর, ময়নাগুড়ির টেকাটুলি, ইন্দিরামোড়
অধিগ্রহণ হয়নি: ফুলবাড়ি, ময়নাগুড়ি রেলগেট, গোয়ালটুলি