মন্ত্রী: শিলিগুড়ি কলেজের অনুষ্ঠানে। ছবি: স্বরূপ সরকার।
টানা বন্ধের জেরে পাহাড়বাসীদের দুরবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে ভরা ক্লাসঘরে প্রায় কেঁদেই ফেললেন এক কলেজ শিক্ষিকা। মঞ্চে তখন বসে রয়েছেন খোদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। পাহাড়বাসীর ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়েও গৌতমবাবু স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, আন্দোলনকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে সমস্যা মিটবে না। তাই পাহাড়ের মানুষকে আরও বেশি করে সরব হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে শিলিগুড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়ন্ত করের অনুরোধে গণজ্ঞাপন বিভাগের স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের সঙ্গে এক প্রশ্নোত্তরের আসরে হাজির ছিলেন গৌতমবাবু। সেখানে অনেকেই পাহাড়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাহাড়ের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কাও করেন। আলোচনার শেষে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা নিমা ডোমা লামা নিজেই মাইক্রোফোন নিয়ে পাহাড়বাসীর আবেগ, বন্ধের ফলে বাড়ির লোকজনদের ভয়াবহ অবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে ভেঙে পড়েন। ওই দুঃসহ পরিস্থিতির অবসান কবে হবে, তা-ও জানতে চান নিমা।
পাহাড়ের বাসিন্দা নিমাদেবী শিলিগুড়ি কলেজের সঙ্গে গত ২০ বছর ধরে যুক্ত। বাবা, মা তো বটেই, পরিবারের অন্য সবাই পাহাড়েই রয়েছেন। আন্দোলন পরিস্থিতির জেরে প্রায় দু’মাস ধরে তাঁদের খাবার মিলছে না। মিলছে না ডাক্তার, ওষুধ। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন বাসিন্দারা। নিমাদেবী মন্ত্রীকে লক্ষ করে বলেন, ‘‘আমি দেখেছি দার্জিলিং বলতে মানুষ কাঞ্চনজঙ্ঘা, পর্যটনের কথা ভাবে। সে ছাড়াও তো পাহাড়ের বাসিন্দারা আছেন। মন্ত্রী হিসেবে প্রজাপালক হওয়া আপনার কর্তব্য। এই পরিস্থিতির মধ্যে ওই বাসিন্দাদের জন্য আপনি কী করার কথা ভাবছেন?’’ পরিচিতদের দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে এর পরে কেঁদে ফেলেন তিনি।
জবাবে পর্যটনমন্ত্রী জানান, দার্জিলিঙের সমস্যার বিষয়টি সরকারের তরফে দেখা হচ্ছে। দার্জিলিং প্রসঙ্গে মানুষ কাঞ্চনজঙ্ঘার কথা বললে তাতে খারাপ কিছু নেই বলেই মনে করেন তিনি। বরং তাতে এলাকার একটা ‘ব্র্যান্ড’ বা পরিচিতি তৈরি হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকার সময় পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরেছেন। পাহাড়বাসীর দুর্দশা দেখেছেন। পাহাড়ে রাস্তার কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিটিএ এলাকায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে করতে দেওয়া হয়নি। এখন আন্দোলনের জেরে যা পরিস্থিতি, তাতে খাবার, বিদ্যুৎ, পানীয় জল স্বভাবিক ভাবে মিলছে না। গৌতম দেবের বক্তব্য, সব কিছুরই একটা সীমা আছে। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের বাসিন্দাদের আমরা ভাইবোন, বাবা-মায়ের মতোই দেখি। তাঁদের ভালবাসি।’’ এর পরেই তিনি জানান, সরকার আরও কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে পাহাড়বাসীর জন্য। নেপালি ভাষায় সরকারি চাকরির পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে, জানান তিনি। গৌতমের বক্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রে যে কেউ আন্দোলন করতেই পারেন। তবে আন্দোলনকারীদের মাথায় রাখতে হবে, এর ফলে যেন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়।’’
এ দিন কলেজে অত্যাধুনিক সুবিধা যুক্ত শ্রেণিকক্ষ এবং পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন পর্যটনমন্ত্রী। প্রশ্নোত্তর পর্বে ছাত্র সংসদের সদস্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত সরকার, শুভম ঘোষ, আকাশ ভাওয়ালরা পাহাড়ের পরিস্থিতির জেরে পর্যটনের ক্ষতি, পড়ুয়াদের সমস্যা, বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত ঘোষ বলেন, মহাত্মা গাঁধীর অহিংসা আন্দোলনকে এই অঞ্চলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পাহাড়ের বাসিন্দা হেলেন লেপচা, দলবাহাদুর গিরিরা। সেই পাহাড়ে হিংসা বন্ধ হোক।