পাচারের ইলিশেই রসনাতৃপ্তি

পদ্মার ইলিশে রসনা তৃপ্তি বাঙালির বছরভরের স্বপ্ন। আর নববর্ষের মধ্যাহ্ন ভোজে তার থাকা না থাকা নিয়ে রীতিমত উৎসাহী যে কোনও বাঙালি। এই বিশেষ দিনে ইলিশের কাঁটাতারের বেড়া টপকানো তাই নতুন কোনও ঘটনা নয়। এবারও সংখ্যায় অল্প হলেও চ্যাংরাবান্দা সীমান্ত দিয়ে কিছু ইলিশ এসেছে এপারে। তবে হিলি সীমান্তে এবার সেভাবে তার দেখা মেলেনি। তাই নববর্ষে পাতে ইলিশের উপস্থিতিতে কোচবিহারের কিছু বাসিন্দার হাসি চওড়া হলেও দক্ষিণ দিনাজপুরের ইলিশ-রসিকদের মুখে আক্ষেপই শোনা গেল।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ ও অনুপরতন মোহান্ত

কোচবিহার ও বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৬
Share:

কোচবিহার বিকোচ্ছে ইলিশ।

পদ্মার ইলিশে রসনা তৃপ্তি বাঙালির বছরভরের স্বপ্ন। আর নববর্ষের মধ্যাহ্ন ভোজে তার থাকা না থাকা নিয়ে রীতিমত উৎসাহী যে কোনও বাঙালি। এই বিশেষ দিনে ইলিশের কাঁটাতারের বেড়া টপকানো তাই নতুন কোনও ঘটনা নয়। এবারও সংখ্যায় অল্প হলেও চ্যাংরাবান্দা সীমান্ত দিয়ে কিছু ইলিশ এসেছে এপারে। তবে হিলি সীমান্তে এবার সেভাবে তার দেখা মেলেনি। তাই নববর্ষে পাতে ইলিশের উপস্থিতিতে কোচবিহারের কিছু বাসিন্দার হাসি চওড়া হলেও দক্ষিণ দিনাজপুরের ইলিশ-রসিকদের মুখে আক্ষেপই শোনা গেল।

Advertisement

কোচবিহারের বড় বাজারগুলিতে এখানকার ইলিশের প্রতি কেজির দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সেখানে বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি হয়েছে হাজার টাকা কেজি দরে। চড়া দামে কিনতে চেয়েও ইলিশ না পেয়ে হু হতাশ করছেন অনেকেই। অনেকে আবার দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত খোকা ইলিশে বছরের প্রথম দিনটি শুরু করেন।

বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার যেমন ইলিশ কেনা হয়নি। কাতলা মাছের ঝোলেই নতুন বছর শুরু করলেন তিনি। সীমান্ত টপকে এদিন ভোরে বালুরঘাটের বাজারে মাত্র একপেটি বাংলাদেশের ইলিশ পৌঁছয় বলে জানা গিয়েছে। কেজি প্রতি দাম ছিল ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বড়বাজারের তামাম মাছ বিক্রেতার মধ্যে মাত্র চারজন বিক্রেতার কাছে ছিল ডালি ভর্তি খোকা ইলিশ। কেজি প্রতি ২৫০ টাকায় খোকা ইলিশ নিমেষে বিক্রি হয়ে যায়। পুরসভার বিরোধী নেত্রী তথা প্রাক্তন আরএসপি চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাসের বাড়ির হেঁসেলেও এদিন প্রধান মেনু ছিল রুইমাছের ঝাল। বিশিষ্ট নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায় ইলিশের বদলে পাবদা মাছেই মধ্যাহ্নভোজন সেরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ইলিশ পাইনি। পাবদার ঝোল রান্না হয়েছে।’’ তবে আইন ও বিচার বিভাগের পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র অবশ্য ইলিশ পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

ব্যবসায়ীদের কাছে জানা গিয়েছে, এ দিনের ইলিশ নেওয়ার জন্য অনেকেই আগাম টাকা দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ইলিশের পরিমাণ খুব সামান্য হওয়ায় তা সবাইকে দেওয়া যায়নি। কোচবিহার রেঞ্জের বিএসএফের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ঢোকার খবর আমাদের কাছে নেই। সীমান্তে কড়া নজরদারি রয়েছে।’’ দিনহাটা মহকুমা ব্যবস্যায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামী বলেন, ‘‘নববর্ষে অনেকেই বাংলাদেশের ইলিশের জন্য মুখিয়ে থাকে। সামান্য ইলিশ ঢুকেছে বলে খবর পাচ্ছি।’’

ইলিশের কারবারীদের কাছে জানা যায়, মূলত বর্ষার সময় চোরা পথে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আসে এ পারে। বর্ষা আসতে এখনও দেরি। তার আগেই পদ্মায় মাঝিদের জালে ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। চোরাকারবারীরা বেশি দাম দিয়ে ওই মাছ নিয়ে এপারে পাচার করে। গীতালদহ, সিতাই, মেখলিগঞ্জের বেশ কিছু খোলা সীমান্ত দিয়ে ওই কলা পাতায় মুড়ে এপারে চলে আসে পদ্মার ইলিশ। একটু বেশি পরিমাণ মাছ হলে ছোট থার্মোকলের বাক্সে প্যাকিং হয়ে তা চলে আসছে। এখন যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার ওজন এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে। গীতালদহ সীমান্তের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘তিন দিন আগেই অগ্রিম দিয়ে দশ কেজি মাছের বরাত দিয়েছি। তার মধ্যে দুই কেজি পেয়েছি। দু’একদিনের মধ্যে আবার ইলিশ আসবে বলে আশ্বাস পেয়েছি।’’

শহরের তহবাজার এলাকায় বড় মাছবাজারের পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতা গৌতম হালদার, উত্তম হালদার ও দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘গতবছরেও সীমান্তের ওপার থেকে পাঁচ কুইন্টাল বাংলাদেশের ইলিশ বালুরঘাটের বাজারে এসেছিল। এদিন মাত্র ৪০ কেজি ইলিশ এসেছে এপারে।’ এ বারের ছবিটা কেন অন্য ? এক আড়তদার জানালেন, বাংলাদেশ থেকে বড় ইলিশ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। পদ্মাতে ছোট ইলিশ ধরাতে কড়াকড়িও চলছে। সে সবের গেরোয়া আটকে গিয়েছে ওপারের ইলিশ।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন