ভূমিকম্পে ফাটল, বাঁশের ঠেকাই ভরসা মেডিক্যালে

করিডর জুড়েই কংক্রিটের স্তম্ভগুলিতে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে চাঙর, বালি সিমেন্টের পলেস্তরা। যে কোনও সময় তা ভেঙে পড়তে পারে আশঙ্কায় স্তম্ভগুলির চারদিকে বাঁশ লাগিয়ে ঠেকা দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করিডরের পরিস্থিতি এমনই বিপজ্জনক হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সৌমিত্র কুন্ডু

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৩৯
Share:

করিডরের স্তম্ভে বাঁশের ঠেকনায় চলছে বিপদরক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

করিডর জুড়েই কংক্রিটের স্তম্ভগুলিতে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে চাঙর, বালি সিমেন্টের পলেস্তরা। যে কোনও সময় তা ভেঙে পড়তে পারে আশঙ্কায় স্তম্ভগুলির চারদিকে বাঁশ লাগিয়ে ঠেকা দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করিডরের পরিস্থিতি এমনই বিপজ্জনক হয়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ত বিভাগের তরফে তা বিপজ্জনক এবং ব্যবহার করতে নিষেধ করার কথা জানালেও কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ।

Advertisement

গত ২৫ এপ্রিল ভূমিকম্পে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যাতায়াতের করিডর জুড়েই ফাটল ধরেছে। পরবর্তীতে আরও একাধিক বার ভূমিকম্পে করিডরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। অথচ কতর্পক্ষ করিডর ব্যবহার করতে নিষেধ না করায় ওই করিডর দিয়েই মেডিসিন বিভাগ থেকে ব্লাড ব্যাঙ্ক, জরুরি বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, বহির্বিভাগে যাতায়াত চলছে। রোগী এবং তার পরিবারের লোকজন থেকে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী সকলেই যাতায়াত করছেন। চিকিৎসক, নার্সদের একাংশ জানান, প্রাণ হাতে করে গত দুই মাস ধরে তারা এই করিডর দিয়ে চলাফেরা করছেন। যা পরিস্থিতি তাতে যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। অথচ কর্তৃপক্ষ করিডর সংস্কার করতে বা সমস্যা মেটাতে এখনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তা ছাড়া করিডরের নিচের এবং দোতলার অংশে রোগীর আত্মীয় প্রচুর লোক রাতে ঘুমোনও। ফটল ধরা কংক্রিটের স্তম্ভগুলিকে ঠেকা দিতে যে বাঁশ লাগানো হয়েছে তাতে মশারি টাঙান। তাতে বড় বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্ত বিভাগের তরফে বাস্তুকার বৈদ্যুৎ কুমার সুকুল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সত্যিই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ওই করিডর ব্যবহার না করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও দিয়েছি। করিডর সংস্কার করতে ৫ কোটি টাকা লাগবে। এবং নতুন করে তৈরি করতে ৬ কোটি টাকা খরচ হবে। সে কারণে সংস্কার না করে নতুন করে করাই ভাল।’’

হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস শারীরিক অসুস্থার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। সেই জায়গায় নির্মল বেরা ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘করিডরের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে দেখা হয়। শুনেছি মেরামতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানা নেই।’’ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় স্বীকার করেন করিডরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। যে কোনও সময় দুঘর্টনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের পূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছে। তারা করিডর দিয়ে যাতে কম মানুষ যাতায়াত করেন সে কথা জানিয়েছেন। তা ছাড়া ওই করি়ডর সংস্কার করা হবে না কি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে তা দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

হাসপাতালে আজ, মঙ্গলবার গলব্লাডার অপারেশন করাবেন পেলকু জোতের বাসিন্দা সুধীর রায়। তাঁর পরিচিত দিলু রায়, মামনি রায়রা এসেছেন। সুধীরবাবু বলেন, ‘‘চার দশক আগে যখন প্রথম এই করিডর তৈরি হয়েছিল তখন আমি রাজমিস্ত্রি হিসাবে কাজ করেছিলাম। পাথর সিমেন্টের ভাগও এই করিডর নির্মাণ কাজের সময় ঠিকাদারের নির্দেশে ঠিক মতে দেওয়া হয়নি। তাই ঝরে পড়ছে। দ্রুত এটা সংস্কার দরকার।’’

মেডিসিন বিভাগের ভবন থেকে সুপারের দফতরে ভবন তথা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের ভবনে, প্রসূতি এবং শিশু বিভাগের ভবনে, জরুরি বিভাগের ভবনে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয়। এক তলায় মেডিসিন বিভাগ থেকে বহির্বিভাগ পর্যন্ত এবং লাগোয়া প্রসূতি বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ব্লাড ব্যাঙ্কে করিডর দিয়ে যাতায়াত করা যায়। তেমনই দোতলা করিডরের মাধ্যমে সুপারের দফতরের দোতলায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট থেকে প্রসূতি বিভাগের দোতলায় শিশু বিভাগে, মেডিসিন বিভাগের দোতলায় শল্যা বিভাগে যাতায়াত করা যায়।

শুধু যাতায়াতই নয়, রাতে করিডর জুড়েই আশ্রয় নেন দূর থেকে আসা রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা। তারা কয়েকশো লোক করিডরে শুয়ে থাকেন। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এবং শল্য বিভাগের রোগীদের আত্মীয়েরা দোতলা করিডরের একাংশে শুয়েও থাকেন। তাতে ওই করিডর ভেঙে কোনও অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেন্ডেন্ট শ্যামশ্রী বসু জানান, করিডরের পরিস্থিতি সত্যিই ভয়ানক হয়ে রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। একই কথা কর্মীদেরও।

কর্মী সংগঠনের নেতা প্রশান্ত সরকার বলেন, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও করিডরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে করিডর সংস্কার বা নতুন করে বানানো দরকার।’’ এর রোগীর আত্মীয় দেবাশিস সরকার করিডর দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রোগী অসুস্থা তাই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। তবে এই করিডরের পরিস্থিতি যা তাতে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement