জড়াল উইলসনের পরিবারের নাম

উদ্ধার রক্তচন্দন, ফের জড়াল চম্প্রমারির নাম

রক্তচন্দন পাচার কাণ্ডে ফের জড়িয়ে গেল কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির পরিবারের নাম। শনিবার জয়গাঁ থানার পশ্চিম সাতালি গ্রামে তিনটি বাড়িতে যৌথ অভিযান চালায় এসএসবি ও বনদফতর। সেখান থেকে প্রায় এক কোটি টাকার রক্তচন্দন কাঠ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হচ্ছে রক্তচন্দন কাঠ। (ইনসেটে) কালচিনির বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বাবা সুবিন চম্প্রমারি। ছবি: নারায়ণ দে।

রক্তচন্দন পাচার কাণ্ডে ফের জড়িয়ে গেল কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির পরিবারের নাম। শনিবার জয়গাঁ থানার পশ্চিম সাতালি গ্রামে তিনটি বাড়িতে যৌথ অভিযান চালিয়ে সীমা সুরক্ষা

Advertisement

বল ও বন দফতর প্রায় এক কোটি টাকার রক্তচন্দন কাঠ উদ্ধার করে। ধৃতদের একজন এ দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, উইলসন চম্প্রমারির বাবা সুবিন চম্প্রমারির লোকজন তাঁর পরিবারকে কাঠগুলি রাখতে বাধ্য করেছিলেন। সুবিন চম্প্রামারি অবশ্য দাবি করেছেন, এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, অভিযানটি গোপন রাখার জন্য স্থানীয় থানা ও রেঞ্জ অফিসে জানানো হয়নি। মাদারিহাটের রেঞ্জ অফিসারকে নিয়ে আচমকা অভিযান চালানোয় বিপুল পরিমাণ রক্তচন্দন উদ্ধার করা গিয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে চারটে পযর্ন্ত প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে চলে চন্দন কাঠ উদ্ধারের অভিযান। কোথাও মাটি খুড়ে, কোথাও পুকুরের জল থেকে তোলা হয় লুকিয়ে রাখা রক্তচন্দন। গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। অভিযান শুরুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাসিমারা ফাঁড়ির পুলিশ পৌঁছয়।

Advertisement

দক্ষিণ ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার হয়ে ভুটানে রক্তচন্দন পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে কিছুদিন আগে নবান্নে একটি নোট পাঠিয়েও ওই ‘করিডর’ ধরে পাচারের খবরও জানানো হয় বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সেই নোটে তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রামারি ও তাঁর পরিবারের নাম উল্লেখ ছিল বলে জানা গিয়েছিল আগেই। তখনই বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা।

এ দিনের অভিযানে ধৃতরা ফের উলসনের বাবা সুবিনের নাম নেওয়ায় বিধায়ক ও তার বাবাকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এসএসবি বা বন দফতরের তরফে অবশ্য কারও নাম উল্লেখের কথা জানানো হয়নি। বন্যপ্রাণ ৩ বিভাগের ডিএফও ভাস্কর জেভি বলেন, “চার টন রক্তচন্দন উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের জেরা করছে এসএসবি।”

চন্দন কাঠ পাচারের অভিযোগে এ দিন রমেল কার্জি ও মালতি নার্জিনারি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রমেল কার্জির জমির নীচ থেকে ১২৪টি রক্তচন্দন কাঠের টুকরো এবং মালতি নার্জিনারির বাড়ির পুকুর থেকে ১২২ টুকরো কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে বলে এসএসবির তরফে দাবি করা হয়েছে। এসএসবি সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার আরও একটি জমির নীচে পুঁতে রাখা ৯ বস্তা রক্তচন্দনের ছাল উদ্ধার করা হয়েছে।

ধৃত রমেল কার্জি এ দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘‘দিনমজুরির কাজে বাইরে ছিলাম। তখন স্থানীয় বিধায়ক উইলসনের বাবা সুবিন চম্প্রমারির লোকজন এসে মাকে রক্তচন্দন কাঠ রাখার জন্য চাপ দেয়। কাঠের প্রয়োজনীয় নথিপত্র রয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন। বাড়িতে কাঠ না রাখলে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়। কাঠ রাখার জন্য ৩-৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলেও ওরা জানিয়েছিল।’’ রমেলের মাকে অবশ্য এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

অপর ধৃত মালতি নার্জিনারি কারও নাম বলেননি। তাঁর দাবি, ‘‘দু’মাস আগে স্থানীয় যুবকরা পুকুরে জোর করে কাঠ ফেলে যায়। সেজন্য আমাদের ১০ হাজার টাকাও দেওয়া হয়েছে।’’ যে মাঠ খুঁড়ে গাছের ছাল পাওয়া গিয়েছে, সেখানকার এক বাসিন্দার দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা এক বাসিন্দা এসে রক্তচন্দনের ছাল রাখার কথা বলে। ধূপকাঠি তৈরি হবে বলে তাঁদেরকে জানানো হয়েছিল বলে ধৃতেরা দাবি করেছে।

এ দিকে, দলের বিধায়কের নাম ফের জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ দিন দুপুরে স্থানীয় বস্তিবাজার এলাকায় গিয়ে বিধায়কের বাবা সুবিন চম্প্রমারিকে পাওয়া যায়। তিনি পাল্টা দাবি করে বলেন, ‘‘আমাদের নাম অহেতুক জড়ানো হচ্ছে। ঘটনাটির পেছনে কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।” উইলসন অবশ্য গত মঙ্গলবার থেকে কলকাতায় রয়েছেন। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা আছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় উইলসন ও তার বাবার গ্রেফতারির দাবি করেন। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকারের আশঙ্কা, ‘‘রাজ্য পুলিশ ধৃতদের হেফাজতে নিলে চাপ দিয়ে প্রভাবশালীদের নাম বাদ দিয়ে দেবে।’’ একই দাবি করেন আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনীল বণিকও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন