হাতি ও মানুষের সংঘাত এড়াতে দুষ্টু হাতিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনকর্তারা। প্রতি বছর হাতির হানায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া বন বস্তি ও গ্রাম গুলিতে হাতির আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে। জঙ্গলে প্রায় আড়াইশোর কাছাকাছি হাতি থাকলেও হাতে গোণা কিছু হাতিই লোকালয়ে ঢোকে বলে জানান বনকর্মীরা। সেই সমস্ত হাতির আকার, উচ্চতা, শরীরের গঠন ক্ষত চিহ্ন ও দাঁত , লেজ দেখে তাদের নাম রাখার কাজ শুরু হয়েছে।
এ বছর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির হানা দু’জন ব্যক্তির মৃতু হয়েছে। বহু ঘর বাড়ি ভেঙে ক্ষেতের ধান ভুট্টা সাবা়ড় করছে হাতিরা। প্রাথমিক ভাবে দমনপুর এলাকায় পালং দাঁতওয়ালা দাঁতাল হাতি, হ্যামিল্টনগঞ্জে মোটা মাথার মাকনা ও রাজাভাতখাওয়া এলাকায় লেজ কাটা দাঁতালকে চিহ্নত করেছেন বনকর্মীরা। এই দুষ্ট হাতিদের ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। বনকর্তা থেকে রেঞ্জ অফিসার বিট অফিসার ও ফরেস্ট গার্ডদের নিয়ে তৈরী হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেখানে দুষ্ট হাতিদের গতি বিধি প্রতিনিয়ত জানাচ্ছেন একে অপরকে। গত শুক্রবার রাতে উত্তর পানিয়ালগুড়ি এলাকায় এক ব্যক্তিকে মেরে ফেলে হাতি। ভুতরির জঙ্গলেও এক অজ্ঞাতপরিচয় ভবঘুরের মৃত্যু হয় হাতির হানায়। বনদফতর পানিয়াল গুড়ির ঘটনায় পালং দাঁতওয়ালা দাঁতালকে চিহ্নত করলেও ভুতরির জঙ্গলের হাতিকে চিহ্নত করতে পারেনি।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, ‘‘মূলত ১০-১২টি হাতি লোকালয়ে উপদ্রব চালায়। সেই সব হাতিকে চিহ্নিত করে নাম দেওয়া হচ্ছে। তার কারণ ওই হাতি গুলি যেই জঙ্গল বা রেঞ্জ এলাকায় দেখা যাবে তার সর্তক থাকবে। সংলগ্ন রেঞ্জের বনকর্মীরা হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখবে তাতে মানুষ ও হাতির সংঘাত কমানোর চেষ্টা করা হবে। আমরা হাতির উচ্চতা, গড়ন, পায়ের ছাপ, লেজ, গায়ে ক্ষত রয়েছে কি না, দাঁতের সাইজ পায়ের গড়ন সহ ২০টি জিনিস দেখে হাতিকে চিহ্নত করার কাজ করছি।” বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে হাতি গণনায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ২২৫টি হাতি পাওয়া গিয়েছিল। ইতিমধ্যে দুষ্ট হাতিদের চিহ্নিত করতে বনকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। লোকালয়ে হাতি ঢুকলে তাদের দেখে নির্দিষ্ট ফর্মে হাতির বিবরণ লিপি বদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। তিনটি হাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রাথমিক ভাবে দমনপুর এলাকায় পালং দাঁত ওয়ালা দাঁতাল হাতি, হ্যামিল্টনগঞ্জে মোটা মাথার মাকনা ও রাজাভাতখাওয়া এলাকায় লেজ কাটা দাঁতালকে বেশি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
ওই সব এলাকার বনকর্মীরা সর্তক থাকছেন। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টা লাগানো রয়েছে এলাকায় হাতি ঢুকলেই গ্রামবাসীরাই ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে সর্তক করতে পারবেন। পটকা ফাটানোর জন্য বিশেষ লোহার পাইপ তৈরি করা হয়েছে যাতে পটাকর আওয়াজ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ৩-৪ মাসের মধ্যে দুষ্ট হাতিদের সম্পূর্ণ তালিকা তৈরীর চেষ্টা চলছে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “হাতিদের চিহ্নিত করার সঙ্গে জঙ্গলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য শৃঙ্খল গড়ে তোলা দরকার। এতে হাতি লোকালয়ে কম ঢুকবে।”